চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে তাইওয়ান অজুহাত ব্যবহার করেই চলেছে ওয়াশিংটন
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, চীন বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তন করতে ও তাইওয়ানকে ন্যাটো জোট বহির্ভূত প্রধান মিত্র হিসেবে ঘোষণার বিল বা প্রস্তাব তুলতে তিনি মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলবেন।তিনি তাইওয়ানে চীনের হামলার হুমকিকে বাস্তব ও প্রকাশ্য বলেও মন্তব্য করেছেন।
চীনা কর্মকর্তারা তাইওয়ানকে পুনরায় চীনের সঙ্গে এক করতে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনা নাকচ করা সত্ত্বেও মার্কিন সরকারের এ ধরনের বক্তব্য উত্তেজনা বাড়ানোরই চেষ্টা মাত্র। তাইওয়ানকে ন্যাটো জোট বহির্ভূত প্রধান মিত্র হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগের কথা এর আগে কখনও মার্কিন কোনো কর্মকর্তা উল্লেখ করেননি। তাইওয়ানের প্রতি সাম্প্রতিক মার্কিন উস্কানিমূলক যোগাযোগের প্রেক্ষাপটে তাইওয়ানের শীর্ষস্থানীয় একজন সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, চীনা সেনারা যদি এই দ্বীপে প্রবেশ করে তাহলে তাইওয়ানি সেনারা পাল্টা হামলা চালাবে।
জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার চীনের ব্যাপারে কূটনৈতিক ও উত্তেজনা প্রশমনের নীতি অনুসরণের দাবি করে আসলেও বাস্তবে উত্তেজনা বিস্তারের নীতিই অনুসরণ করছে। এমনকি তাইওয়ানের ব্যাপারে চীনের ঘোষিত লাল সীমানা লঙ্ঘনেরও স্পর্ধা দেখাচ্ছে। তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের যুদ্ধ লেগে গেলে সেক্ষেত্রে মার্কিন সরকার তাইওয়ানকে নিজের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করবে বলেও মার্কিন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে আভাস দিয়েছেন। সম্প্রতি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের প্রধান ন্যান্সি প্যালোসি তাইওয়ান সফর করে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করেছেন। চীনের ব্যাপক হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও আরও কয়েকজন মার্কিন সাংসদ তাইওয়ান সফর করেছেন। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, যারা আগুন নিয়ে খেলতে চায় তাদের হাত পুড়ে যাবে! তাইওয়ানে ন্যান্সি পেলোসির সফরের পরপরই চীন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে এর প্রতিবাদ জানায়।
চীন তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে মনে করে এবং জাতিসংঘও এ বিষয়টিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মার্কিন সরকারও ১৯৭৯ সনে এক চীন নীতি মেনে নিয়ে তাইওয়ানকে একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। সেই থেকে চীনের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের উপর্যুপরি হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও মার্কিন সরকারগুলো নানা আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে চীনকে কোণঠাসা করার ও তাইওয়ানে হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং তাইওয়ানের সঙ্গে স্বাধীন রাষ্ট্রের মত আচরণ করছে।
মার্কিন সরকার প্রায়ই তাইওয়ানের কাছে নানা ধরনের সমরাস্ত্র বিক্রি করছে ও ওই অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে। ফলে তাইওয়ানের ওপর চীনের কর্তৃত্ব তথা বেইজিংয়ের এক চীন নীতির প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটন তাইওয়ানের কাছে ১১০ কোটি ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র বিক্রি করবে বলে জানিয়েছে। এসবের জবাবে ক্ষুব্ধ চীন ন্যান্সি পেলোসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতার কয়েকটি ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এ ছাড়াও চীন তাইওয়ান দ্বীপের আশপাশে সামরিক মহড়া জোরদার করেছে। এভাবে চীন ও মার্কিন সরকারের মধ্যে সম্পর্কে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং এসব উত্তেজনার জন্য মার্কিন সরকারের উস্কানিমূলক ও হস্তক্ষেপকামী তৎপরতাই দায়ি।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে