ইসলামী ঐক্যের অশেষ গুরুত্ব ও রূপরেখা সম্পর্কে  ইরানের সর্বোচ্চ নেতার স্মরণীয় বক্তব্য

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ি বলেছেন, এক-মেরুকেন্দ্রীক বিশ্ব-ব্যবস্থার অবসান ঘটছে।

তিনি বলেছেন কেবল একটি বা দু'টি দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার যে ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে তা আর আগের মত কার্যকর নেই। জাতিগুলো জেগে ওঠায় বলদর্পি এ ব্যবস্থা ক্রমেই বৈধতা হারাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। ইরানে ইসলামী ঐক্য বিষয়ক ৩৬ তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এসব মন্তব্য করেছেন।


প্রায় ৩২ বছর ধরে ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র ও বিপ্লবী তৎপরতায় সর্বোচ্চ নেতৃত্ব দিয়ে-আসা এই অভিজ্ঞ ইসলামী আইনবিদ ও রাষ্ট্রনেতা আরও বলেছেন, মার্কিন সরকারের মত দাম্ভিক শক্তিগুলো ইরাক, ইরান, লেবানন ও সিরিয়ার মত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর অতীতে তাদের ষড়যন্ত্রের নীল-নক্সা চাপিয়ে দিত! কিন্তু বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। 

বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষার জন্য মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, ইসলামী ঐক্যের অর্থ এটাই, ইসলামী ঐক্যের অর্থ মুসলিম দেশগুলোর ভৌগলিক একতা নয়, ভৌগলিক ঐক্য অসম্ভব। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমাদেরকে আগে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থগুলো সনাক্ত করতে হবে এবং এরপর ঠিক করতে হবে কারা বন্ধু ও কারা শত্রু আর কিভাবে বন্ধুদের সঙ্গে আচরণ করতে হবে; ইসলামী ঐক্য মানে দাম্ভিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেন, বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ উন্নত অবস্থান অর্জনে সক্ষম এবং তা হতে পারে অন্যদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। 

ইসলামী ঐক্য যে অর্জন করা সম্ভব সে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শত্রুদের বিশেষ করে মার্কিন সরকার ও অবৈধ দখলদার ইসরাইলের উস্কানি এড়িয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকাটা জরুরি। তিনি ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কোনো কোনো মুসলিম সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘটনাকে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতামূলক তৎপরতার অংশ বলে মন্তব্য করেন। 

ইসলামী ইরান যে দুই প্রধান পরাশক্তি তথা মার্কিন ও সোভিয়েত পরাশক্তিসহ তাদের সহযোগী পরাশক্তিগুলোকে প্রতিরোধে সফল হয়েছিল সে ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, এরা সবাই ইরানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েও এর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারেনি এবং তারা যদি এখনও ভেবে থাকে যে ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সুদৃঢ় বৃক্ষকে উৎপাটন করতে পারবে- তাহলে তারা মারাত্মক ভুলের মধ্যে রয়েছে।  

মুসলিম মাজহাবগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্যের মাধ্যম হওয়া উচিত নয় –এই মন্তব্য করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, মার্কিন ও ব্রিটিশ রাজনীতিবিদরা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ নিয়েই শিয়া-সুন্নি বিভেদ উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছেন, তারা শিয়া ও সুন্নি কারোই বন্ধু বা কল্যাণকামী নয়।

ব্রিটিশ শিয়া ও মার্কিন সুন্নিদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার বিষয়ে তার ( ইরানের সর্বোচ্চ নেতার) বক্তব্যের অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ শিয়া মানে ব্রিটেনের শিয়া মুসলমান ও মার্কিন সুন্নি মানে আমেরিকান সুন্নি মুসলমানকে কখনও বোঝাইনি আমি! ব্রিটিশ শিয়ারা তথা ব্রিটেনের উস্কানিতে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদে  জড়িত শিয়ারা মুসলিম বিশ্বের যে কোনো স্থানেই থাকতে পারে তদ্রূপ মার্কিন উস্কানিতে একই ধরনের বিভেদকামিতায় জড়িত সুন্নিরা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের জন্য সংকট সৃষ্টি করছে, যেমন, আইএস বা দায়েশ ও ওয়াহাবি গোষ্ঠী বা তাকফিরি গোষ্ঠী যারা কথায় কথায় মুসলমানদের কাফির বলে এবং তারা মুসলমানদের মত ইসলামী বিধি-বিধানে বিশ্বাসী হলেও কাজে কর্মে ইসলামের শত্রুদের সেবা করে যাচ্ছে। শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের উভয় অংশেরই চরমপন্থী ও বিভেদকামীদের বিষয়ে তিনি সতর্ক থাকতে মুসলিম উম্মাহর সবার প্রতি আহ্বান জানান।

ইসলামী ঐক্যের অশেষ গুরুত্ব ও রূপরেখা সম্পর্কে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার এইসব প্রজ্ঞাপূর্ণ বক্তব্য অত্যন্ত সময়োপযোগী, দৃষ্টান্তপূর্ণ, অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ এবং চির-স্মরণীয়। 

খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news