"প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং সম্পর্ক উন্নয়নই ইরানের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি'

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টিকে প্রধান মূলনীতি হিসেবে বিবেচনা করে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি। প্রতিবেশি আর্মেনিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ককে জড়িয়ে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, কোনো এক প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার অর্থ এই নয় যে তা অন্য প্রতেবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের বিরোধী।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এক বক্তৃতায় আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সীমান্তে ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক মহড়াকে ইয়ারাবানের প্রতি তেহরানের সমর্থন হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানয়ানি ইলহাম আলিয়েভের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সীমান্তে ইরানের সাম্প্রতিক মহড়াকে একটি রুটিন এবং পূর্ব পরিকল্পিত কর্ম হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশী দেশগুলোকে অবহিত করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

নাসের কানয়ানি বলেন,  কারাবাখ অঞ্চলে উত্তরাঞ্চলীয় দুই প্রতিবেশী আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে দীর্ঘ বিরোধের বিষয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সর্বদাই একটি মৌলিক নীতি ধারন করে তা হলো এ অঞ্চলে আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর আওতায় দেশ দুটোর মধ্যে চলমান বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।তাই তেহরান সব সময় আজারবাইজানের যেকোনো ভূমি দখলদারিত্বের নিন্দা করেছে এবং এসব এলাকার মুক্তির বিষয়ে সর্বোচ্চ স্তরে সমর্থন করেছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিবেশীদের ব্যাপারে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সাম্প্রতিক অবস্থান নানাভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত ইরানকে জড়িয়ে আর্মেনিয়া সম্পর্কে এই বিবৃতিগুলো বাকু এবং ইহুদিবাদী শাসকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত। আজারবাইজান মনে করছে যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান যতই কঠিন অবস্থান গ্রহণ করুক না কেনো ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং আমেরিকার আঞ্চলিক নীতিতে তার অবস্থান শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাকু সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

দ্বিতীয়ত, ইলহাম আলিয়েভ ভান করার চেষ্টা করছেন যে আর্মেনিয়া তার অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো এমনকি বাকুর শক্তিশালী সমর্থক তুরস্কের  সাথে মিলে একটি নতুন জোট তৈরি করছে। 

এই অঞ্চল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জালাল মির্জাই বলেছেন: "এতে কোন সন্দেহ নেই যে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ পশ্চিমা ও ইহুদিবাদীদের সাথে তার সম্পর্ক আরও উন্নত করার জন্য ইহুদিবাদী এবং তার কিছু সমর্থকদের ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। 

 ইরানের বিরুদ্ধে আলিয়েভের এই তীর্যকপূর্ণ মন্তব্যের তৃতীয় কারণ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আজারবাইজান জনগণের জন্য তিনি যে অপমানজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তা থেকে মানুষের দৃষ্টিকে আড়াল করা। 

যাই হোক না কেনো এ অঞ্চলের মানুষ ভালো করেই জানে যে ভালো বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে জোরদার করবে এবং তা অঞ্চলকে চূড়ান্তভাবে শান্তি ও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু এই অঞ্চলের শত্রুরা কখনো চায় না যে  আজারবাইজান এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা হোক এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্প্রসারণ রোধ করার জন্য তারা প্রতিটি সুযোগ ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news