করোনার বিস্ফোরণ চিনে, হাজারে হাজারে মৃত্যু, গোটা বিশ্বে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

 বাঁধভাঙা বন্যার জলের মতো সংক্রমণ ছড়াচ্ছে চিনে। করোনার বিস্ফোরণ হয়েছে যেন। বিধিনিষেধ উঠে যেতেই চিনে ফের মহামারীর মতো ছড়াচ্ছে করোনা। কুড়ি সালের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি ফিরে এসেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। যা চাপা দিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে শি জিনপিং সরকার।

সূত্রের খবর, কোভিডের কারণে বর্তমানে দিনে প্রায়ে ১৫০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু সেই সংখ্যা দেখাতে নারাজ চিনের সরকার। হাসপাতালে রোগীদের ভিড় উপচে পড়ছে। বেডে জায়গা নেই, মাটিতেই শোয়ানো হচ্ছে রোগীদের। শ্মশানগুলিতে ভিড় বাড়ছে। বেশিরভাগই করোনা রোগীদের শেষকৃত্য হচ্ছে বলে খবর সামনে এসেছে। চিনের একজন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এরিক-ফেইগল-ডিং দাবি করেছেন, গত ৯০ দিনে করোনায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতদিনে লাখের কাছাকাছি এসে গেছে। চিনের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত যা কোনওভাবেই সরকারি পরিসংখ্য়াণে জানানো হচ্ছে না।


পশ্চিমী এক গবেষণা সংস্থার দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী বছর ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে চিনে। শুধু তাই নয়, কোভিড ফের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কাও করা হয়েছে। গবেষণা সংস্থার দাবি, গোটা বিশ্বে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। আবারও সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে। যদিও এই নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে শি জিনপিং সরকার।


ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য বলছে, সংক্রমণ ঠেকাতে ‘কোভিড জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছিল চিনা সরকার। কিন্তু গত মাসে এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। ফলে বাধ্য হয়ে সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়। ধীরে ধীরে শিথিল করা হয় কোভিডের বিধি-নিষেধ। এর পরই হু হু করে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ ও মৃত্যু। মৃতের সংখ্যা বাড়তেই ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে কড়া নির্দেশ দেয় বেজিং। কোভিডে মৃত্যু হলেও ডেথ সার্টিফিকেটে তা নিউমোনিয়া লেখা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। আগের মতো নিয়ম মেনে সংক্রমিতের মৃত্যুর পর মৃতদেহ পরিবারের হাতেও দেওয়া হচ্ছে না, চুপিচুপি তা পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর।


করোনার মহামারী সুকৌশলে আড়াল করেছে বা এখনও করছে চিন, এই অভিযোগ গোটা বিশ্বেরই। রেডিও ফ্রি এশিয়া (RFA)-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর যে সংখ্যা দেখিয়েছে চিনের ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার, মৃত্যু হয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি। কোভিডের বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর থেকেই শহরের শ্মশানগুলিতে দেখা গেছে ভিড়। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে দেহ সৎকারের কাজ। অনেকেরই দাবি, হাজার হাজার দেহ পোড়ানো হয়েছে শ্মশানগুলিতে।

চিনে ভাইরাসের সংক্রমণ কমলেও থামেনি। বিপুল জনসংখ্যার দেশে ফের এই রোগ মহামারী হবে কিনা সেটাও অজানা। মানুষের দেহে নিজেদের সুরক্ষা কবচ গড়ে তোলা সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন ফের তাদের মারণ খেল দেখাবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল ‘ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল’ ( Lancet medical journal )। সংক্রমণ-পরবর্তী পর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে আগাম সম্ভাবনার কথাও বলেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

ফ্রান্সের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও এপিডেমোলজিস্ট অ্যান্টনি ফ্ল্যাহল্ট বলেছেন, যে কোনও বড় ঝড় ওঠার আগে প্রকৃতি যেমন শান্ত হয়ে যায়, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে। চিনে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ২০১৯ সাল থেকে। মানুষ মরতে শুরু করেছিল তখনই। পুরো ব্যাপারটাই সুকৌশলে চাপা দিয়েছিল চিন। প্রথম মৃত্যু দেখানো হয় ডিসেম্বরে। অথচ বিভিন্ন সূত্র বলেছিল ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায় তারও অনেক আগে, উনিশ সালের মাঝামাঝি থেকে। সেই খবর ধামাচাপা দিয়েছিল চিন। যতদিনে সংক্রমণের খবর সামনে আসে, ততদিনে কিন্তু ভাইরাস আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তার বড় ঝাপটা আসে জানুয়ারি থেকে। একধাক্কায় শয়ে শয়ে মানুষ মরতে শুরু করে। চিন থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। কী বিপদ ঘটছে সেটা বোঝার আগেই মড়ক শুরু হয়ে যায়। অজানা এই শত্রুকে রোখার সময়ও পায় না মানুষ। আবারও সেই ভয়ঙ্কর সময়টা ফিরে আসবে কিনা সে নিয়ে চিন্তা বেড়েছে।খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে 

news