রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বকাপ ফুটবলের গুরুত্ব


আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের চ্যাম্পিয়নশিপের মধ্য দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ শেষ হলেও এই বিশ্বকাপের আয়োজনকে কেবল খেলা হিসেবে দেখলে চলবে না। বরং বিশ্বকাপের রয়েছে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক গুরুত্ব।

এ যাবৎকালে যতগুলো দেশ বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে কাতার বিশ্বে সুপরিচিতি অর্জন করেছে। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই বাস্তবতা যে এই দেশটি বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ আয়োজনে অত্যন্ত বিরোচিতভাবে সফল হয়েছে। কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন দেখিয়েছে যে ছোট দেশগুলো বিশ্বে তাদের নাম উজ্জ্বল করতে পারে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে সামান্যতম নিরাপত্তা সমস্যা ছাড়াই কাতারে বিশ্বকাপের সফল আয়োজন প্রমাণ করেছে যে পশ্চিম এশিয়ার অঞ্চল যার সম্পর্কে বিশ্ব গণমাধ্যম সব সময় যেমন প্রচার করে আসছে সেরকম বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতাপূর্ণ নয়  বরং এটি ক্রম উন্নতির দিকে এগিয়ে চলা একটি অঞ্চল।

প্রকৃতপক্ষে কাতার বিশ্বকাপ প্রমাণ করেছে যে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা আধিপত্যকামী বৃহৎ শক্তিগুলোর রাজনীতির ফল এবং যখন বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজনে বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করবে না তখন এই অঞ্চলে কম নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা যাবে। এছাড়াও কাতারে বিশ্বকাপ দেখিয়েছে যে ইসলামিক দেশগুলো একে অপরের প্রতি সহনশীলতার ছায়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে  এবং তারা আঞ্চলিক উত্তেজনা হ্রাস করতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একটি ইসলামিক দেশে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজন প্রমাণ করে যে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারণার বিপরীতে ইসলাম একটি দয়াশীল এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধর্ম। ইসলাম কোনো ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে বরদাশত করে না বরং যারা ইসলামের নামে এ ধরনের অপরাধ করে তারা ইসলাম বোঝে না এবং তারা ইসলামী বিশ্বের প্রতিনিধি নয়। প্রকৃত ইসলাম হল এমন এক ধরনের ইসলাম যা ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর জোর দেয়।


বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে দেওয়ার আগে মেসিকে পরিয়ে দেওয়া হয় আরবের মর্যাদাপূর্ণ পোশাক ‘বিশত’
এই বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান গতকাল সোমবার আঞ্চলিক বিষয়ে তেহরান সংলাপ শীর্ষক ফোরামের তৃতীয় অধিবেশনের অবকাশে কাতারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ আল-খলিফির সাথে বৈঠকের সময় কাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ খেলার সফল আয়োজনকে ইসলামী দেশগুলির জন্য গর্বের বিষয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন। 


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কাতার বিশ্বকাপ দেখিয়েছে যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি একটি ঘৃণ্য অবস্থান বিরাজ করছে। এই বিশ্ব মঞ্চ থেকে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী প্রত্যাশা করেছিল যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পর্যায়ে আরব জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বাভাবিককরণকে ত্বরান্বিত এবং প্রসারিত করার বিরল সুযোগ পাবে কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে এর উল্টো ঘটনা ঘটেছে। ইহুদিবাদীদের হিসেব-নিকেশ পাল্টে দিয়ে কাতার বিশ্বকাপ হয়ে উঠলো ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং  নির্যাতিত ও প্রতিরোধকামী ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের এক বিশাল ক্ষেত্র।বিশ্বকাপে দর্শকরা যেভাবে দোহায় ইহুদিবাদী সাংবাদিকদের প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে স্টেডিয়ামের ভেতরে ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক ও ইসরাইল নিপাত যাক বলে স্লোগান দিয়েছে তা ইহুদিবাদী দখলদারদের বিরুদ্ধে ইসলামি দেশগুলোর বিদ্বেষেরই বহিঃপ্রকাশ।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা কাতার বিশ্বকাপের সামাজিক মাত্রার বিষয়টি ফুটে উঠেছিল তা হলো বিশ্বে ফুটবল তারকাদের মধ্যে পরিবারের গুরুত্ব। ফুটবল সুপারস্টাররা তাদের পরিবারের সাথে বিশ্বকাপের জয় উদযাপন করেছেন। বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে এই সাফল্য উদযাপন করেছেন ক্রোয়েশিয়ার তারকা ফুটবলার লুকা মদ্রিচ। চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর স্ত্রী, সন্তান ও মাকে নিয়ে এই সাফল্য উদযাপন করছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। এছাড়া, মরক্কোর জাতীয় দল কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার পরে দলের মিডফিল্ডার সেফিয়ান বাউফল তার মাকে জড়িয়ে ধরে উদযাপন করেছিলেন। এই আচরণগুলো দেখায় যে পরিবারও এই বিশ্ব মঞ্চের  একটি অংশ এবং ফুটবল বিশ্বের বড় তারকাদের সাফল্যের কারণ।
 খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news