তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প, নিহত ৫ শতাধিক, আহত কয়েক হাজার
তুরস্কের দক্ষিণপূর্বাঞ্চল ও সিরিয়ায় স্থানীয় সময় আজ ভোর চারটায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে পাচ শতাধিক মানুষ নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮। এতে দুই দেশে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। ধ্বংসস্তুপের নীচে চাপা পড়ে আছে অসংখ্য মানুষ। তাই মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তুরস্ক জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পে তাদের দেশে ২৮৪ জন নিহত ও ২০২৩ জন আহত হয়েছে। প্রতিবেশী সিরিয়ায় দুশতাধিক নিহত ও ছয়শরও বেশী আহত হয়েছে। তুরস্ক ভুমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট ভূমিকম্পে আহত লোকদের জন্য জনগণের প্রতি রক্তদানের আবেদন জানিয়েছে।
এটি হলো শতাধিক বছরের মধ্যে তুরস্কে সবচাইতে ভয়াবহ ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগির ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ২৪.১ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর ৪২টি ভূকম্পন সংঘটিত হয় যার মধ্যে বৃহত্তমটির মাত্রা ছিল ৬.৭। তুরস্ক ও সিরিয়া প্রতিবেশী লেবাননেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোলেমান সয়লু বলেন, আজ ৬ মাত্রার ওপরে অন্তত ৬টি ভুকম্পন অনুভুত হয়েছে। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে তুরস্কে ২৮৪ জন ও ২০২৩ জন আহত হয়েছে এবং প্রতিবেশী সিরিয়ায় দু’শরও বেশি মানুষ নিহত ও ছ’শরও বেশী আহত হয়েছে। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলে উদ্ধার ও অনুসন্ধান দল পাঠিয়েছে তুরস্ক। সেখানে এখন উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
সিরিয়ায় এ ভূমিকম্প ও এর পরের কম্পনে অন্তত দুশ’রও বেশী নিহত ও ছশ’রও বেশী আহত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সিরিয়ার সরকারী বার্তা সংস্থা এ তথ্য জানায়।
সিরিয়ার এটমিড শহরের একজন ডাক্তার জানান যে, তার শহরেই ১১ জন নিহত হয়েছে। ডা: মুহীব কাদ্দোর বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন যে, ধ্বংসস্তুপের নীচে আরও বহু লোক চাপা পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের আশংকা এ দুর্যোগে শত শত লোক নিহত হতে পারে।
তুরস্কের অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল প্রেরণ
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসিপ তায়েব এরদোগান এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল পাঠানো হয়েছে।
সিএনএন জানায়, এটি হলো শতাধিক বছরের মধ্যে সবচাইতে ভয়াবহ। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের নুরদাগির ২৩ কিলোমিটার পূর্বে ভূপৃষ্ঠের ২৪.১ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর ৪২টি ভূকম্পন সংঘটিত হয় যার মধ্যে বৃহত্তমটির মাত্রা ছিল ৬.৭। তবে তুরস্কের এএফএডি কর্তৃপক্ষ জানায়, আজ ভোর চারটা ১৭ মিনিটে তাদের দেশের মধ্যাঞ্চলের পাজারসিক জেলার এ ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ৭ কিলোমিটার গভীরে।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন
ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর তুরস্কের ডিজস্টার এন্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (এএফএডি) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। এএফএডি এক বিবৃতিতে জানায় যে, শহরগুলোতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ চালানোর কাজে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।
সংস্থাটি জানায়, সোমবার স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানে এ ভূমিকম্প। এরপর ৩২টি ভূকম্পন অনুভূত হয়। তুরস্কের কাহরামানমারাস, হাতয়, উসমানি, গাহিয়ানটেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির প্রদেশগুলো এ ভূমিকম্প আঘাত হানে।
জনগনের প্রতি রক্তদানের আহবান
তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট ভুমিকম্পে আহত লোকদের জন্য রক্ত দিতে জনগনের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট এর প্রেসিডেন্ট কেরেম কিনিক বলেছেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর তার সংস্থা তুরস্কের উত্তরাঞ্চলে অতিরিক্ত রক্ত পাঠানো শুরু করেছে। আমরা ডিপ্রিম অঞ্চলে অতিরিক্ত রক্ত ও রক্তজাত পণ্য পাঠাচ্ছি। প্রথম পর্যায়ের পাঠানোর মতো রক্ত আমাদের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাংকে মজুদ আছে। কিন্ত ভবিষ্যতে আরও প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, সেকথা বিবেচনা করে আমরা সারা তুরস্কের জনগণের প্রতি রক্ত দানের আবেদন জানিয়েছি আমরা।
তুরস্কে নিহত ২৮৪
অন্তত ২৮৪ জন নিহত ও ২০২৩ জন হয়েছেন। তুরস্ক অবশ্য ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৪ বলে উল্লেখ করে। তুর্কী কর্মকর্তারা জানান, মালাটিয়া সানলিউফাতে উসমানিতে এবং দিয়ারবাকিরে হতাহতের এসব ঘটনা ঘটেছে। হতারা বলেন, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কারণে প্রাণহানির সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে।
সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চল দু’শতাধিক নিহত
শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে সিরিয়ার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে দু’শতাধিক নিহত ও ছ’শর’ও বেশী আহত হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি’র কারণে উদ্ধার দলগুলো ধ্বংস্তুপের নীচ থেকে লোকদের উদ্ধার কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, ইদলিব, আলেপ্পো, হামা ও লাটকিয়া প্রদেশে শতাধিক লোক নিহত ও দু’শরও বেশী আহত হয়েছেন।
সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স জানায়, উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবে ভুমিকম্পে ১০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক শ’।
হুয়াইট হেলমেট নামক একটি সংস্থা টুইট বার্তায় জানায়, সরকারীভাবে প্রাণ হানির সংখ্যা জানানো হয়নি। অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তুপের নীচে শত শত লোক আটকা পড়ে আছে। ১২ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত অঞ্চলটি অসংখ্য ভবন এ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে।
সিরিয়ার উত্তর উত্তরপূর্বাঞ্চলের অবস্থা ‘বিপর্যয়কর’
বিরোধিদলীয় সিরিয়ান সিভিল সিফেন্স বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরপশ্চিম সিরিয়ার পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা জানায়, সম্পূর্ণ ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে এবং তার নীচে লোকেরা চাপা পড়ে রয়েছে। সিভিল ডিফেন্স জনগণকে ভবন ছেড়ে খোলা স্থানে এসে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এনবিএস/ওডে/সি