বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য  উদ্ধার দল তুরস্কে

সারা বিশ্ব থেকে উদ্ধার দল তুরস্ক অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল এবং ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। যেসব দেশ উদ্ধার দল পাঠিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপাান, ইসরায়েল, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, উজবেকিস্তান, আজারব্ইাজান, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান ও রাশিয়া। তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার কাজ চালানের জন্য এসব উদ্ধার দল সেখানে রওয়ানা হয়েছে। অনেকে ইতোমধ্যে সেখানে পৌঁছেও গেছে।

তুরস্ককে সহায়তা করার আহ্বানে যে দেশটি প্রথম এগিয়ে এসেছে সেটি হলো আজারবাইজান। উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য তারা ৪২০ সদস্যের একটি উদ্ধার দল পাঠিয়েছে। এ ছাড়া দেশটি দু’টি বিমান বোঝাই মানবিক ত্রানসামগ্রীও পাঠাচ্ছে। মধ্যাঞ্চলের কাহরামানমারাসে দু’দফা ভূমিকম্পে ১০টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আজারবাইজানের জরুরি পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের নির্দেশে নিকট ভবিষ্যতে মানবিক ত্রাণ বোঝাই দুটি বিমান পাঠানো হবে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি বিমান ফিল্ড হাসপাতাল হিসেবে কাজ করবে। আজারবাইজানি ডাক্তারা একটি উপদ্রুত এলাকায় স্থাপিত এ হাসপাতাল স্থাপন করবে। আজারবাইজানি ডাক্তারা চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অন্য বিমানে করে পাঠানো ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে তাবু, কম্বল ও হিটার।

২১ দমকল কর্মী, ২ জন ডাক্তার, ৩ জন জরুরি চিকিৎসক, ২টি অনুসন্ধান ও উদ্ধার কুকুর এবং গ্রীকের বিশেষ দুর্যোগ প্রতিকার ইউনিটের ২ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে গ্রিসের উদ্ধার দলটি গঠন করা হয়েছে। গ্রীক উদ্ধার দলটিও কাহরামানমারাসে পাঠানো হয়েছে। হেলেনিক সশস্ত্র বাহিনীর একটি সি-১৩০ বিমান এ উদ্ধার দল নিয়ে এসেছে। গ্রীসের রাজধানী এথেন্সের কাছে এলফসিনা বিমান বন্দর থেকে বিমানটি করে আদানা আদানার ইনসিরলিক বিমানঘাঁটিতে পেঁৗঁছেছে। তুরস্ক ও গ্রীস প্রতিবেশী দেশ এবং তারা পরস্পরের দুর্যোগের সময় পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের মারমারা ভূমিকম্পের সময় গ্রীস এবং একই বছর এথেন্সে ভূমিকম্পের সময় দেশদুটি পরস্পরের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকটি কুকুরসহ সুইস বিশেষজ্ঞ ও উদ্ধারকর্মীদের দল সোমবার জুরিখ বিমান বন্দর থেকে তুরস্কের বিধ্বস্ত এলাকায় রওয়ানা হয়। ইতালি বেসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তরের সহায়ক দল পাঠিয়েছে। এরপর রোম একটি ডাক্তার টিম ও  অন্যান্য সাজসরঞ্জাম পাঠাবে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের কর্মকর্তাদের অনুরো্েযধ সাড়া দিয়ে ৭৯ সদস্যের একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল পাঠাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ৭৯ সদস্যের দলটি তুরস্কের অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত  এলাকায় গেছে। দলটি ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহচ্যূত লোকদের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। ইউএসএআইডি ও পেন্টাগণও সহায়তা করার ক্ষেত্রে তুর্কী প্রতিপক্ষের কাজের সাথে সমন্বয় করছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ১৫০জন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও ত্রাণ কর্মী নিয়ে গঠিত একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল পাঠিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি দলটি তুরস্ক পৌঁছায়। দলটি জীবন রক্ষার কাজে সহায়তা প্রদান করবে। শান্তির বার্তা হিসেবে ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্সেস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ মানবিক ত্রাণ দল তুরস্কের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে।

উজবেকিস্তানের একটি বিমান উদ্ধার দল ও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে তুরস্কে পৌঁছেছে। উজবেক প্রেসিডেন্ট দপÍর  জানায়, উজবেকিস্তানের জরুরি বিষয় মন্ত্রণালয়ের ১০০ সদস্যের উদ্ধার দলটি বিশেষ সাজসরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও মানবিক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বিমানটি তাসখন্দ থেকে সোমবার তুরস্কে পৌঁছে।

জাপানও তুরস্কের ভূমিকম্প উপদ্রুত অঞ্চলের জন্য দেশটির আন্তর্জাতিক জরুরি উদ্ধার দল পাঠাচ্ছে। ৩ সদস্যের অগ্রগামী দল ও ১৫ সদস্যের উদ্ধার দল জাপানের হানেডা বিমান বন্দর থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে আদানা পৌঁছুবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। তাইওয়ান ৪০ সদস্যের একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল পাঠিয়েছে। তাদের উদ্ধার দলে ৫টি কুকুর এবং  কয়েক টন  যানবাহন ও যন্ত্রপাতি রয়েছে।
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের ১০০ সদস্যের উদ্ধার দল এবং দুটি আইএল-৭৬ বিমান ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ভূমিকম্পের পরেই তুরস্কের বিধ্বস্ত এলাকায় পৌঁছেছে।

মালয়েশিয়া ৭৫ সদস্যের অনুসন্ধান ও উদ্ধার দল পাঠাচ্ছে তুরস্কের উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আরমিজান আলী এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, তাদের সামরিক জরুরি ইউনিট তুরস্কের উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজে সহায়তা করার জন্য সেনা ও ড্রোন মোতায়েন করছে। স্পেনের ত্রাণ ও স্টাফ মাল্টা বিমানবন্দরে পেীঁছেছে।  তুরস্ক কর্তৃপক্ষ সেখানে একটি আন্তর্জাতিক ত্রান কেন্দ্র স্থাপন করেছে। স্পেন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ও জনগণকে সহায়তা করতে অতিরিক্ত সহায়তা দেয়ারও প্রস্ততি নিচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

ওয়ারশ’ থেকে পোলিশ দমকল কর্মীরাও তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরে পৌঁছেছে তুর্কী উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজে সহায়তা করার জন্য। হাঙ্গেরি, রুমানিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের উদ্ধার কর্মীরাও তুরস্কের ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় পৌঁছেছে।

কাতার তুরস্কে ১২০ সদস্যের উদ্ধার কর্মীর একটি দল এবং একটি ফিল্ড হাসপাতাল, ত্রাণ সামগ্রী, তাবু শীত নিবারন সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ  মোহাম্মাদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান তুরস্ক ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ফোন করে সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দেন। আমিরাতের বার্তা সংস্থা জানায়, আমিরাত ইতোমধ্যে তুরস্কের ত্রাণবাহী প্রথম বিমানটি দক্ষিণাঞ্চলে পাঠিয়েছে। আমিরাত সেখানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।

এনবিএস/ওডে/সি

news