সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম নর্দার্ন সুপারচার্জার্সে যোগ দিয়েছেন। এই দলটি আইপিএলের সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের মালিকানাধীন। ভারতীয় মালিকানার পরও পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের নির্বাচন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

গত কয়েক মাস ধরে শোনা যাচ্ছিল, দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়া হতে পারে। কারণ, এই টুর্নামেন্টের আটটি দলের মধ্যে চারটির মালিক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। বাকি দুটিতে ভারতীয়-আমেরিকান বিনিয়োগ রয়েছে।

এই আশঙ্কার পেছনে ছিল পাহালগাম হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনা। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ২০ লিগেও কোনো পাকিস্তানি খেলোয়াড়কে খেলতে দেওয়া হয়নি, যেখানে আইপিএল মালিকদের বিনিয়োগ রয়েছে।

তবে নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের ঘোষণায় সেই গুজব মিথ্যা প্রমাণিত হলো। দলটি মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমকে সাইন আপ করেছে। সান গ্রুপের মালিকানাধীন এই দলটি দেখিয়ে দিল, মালিকানা খেলোয়াড় নির্বাচনে বাধা নয়।

আমির অস্ট্রেলিয়ার বেন ডোয়ারশুইসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, যিনি জাতীয় দলের ডিউটিতে ব্যস্ত। অন্যদিকে, ইমাদ ওয়াসিম নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনারকে রিপ্লেস করবেন আগস্টের ৭ ও ১০ তারিখের ম্যাচে।

ইসিবি প্রধান রিচার্ড গোল্ড আগেই বলেছিলেন, দলের মালিকানা খেলোয়াড় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু মার্চের ড্রাফটে কোনো পাকিস্তানি খেলোয়াড় না থাকায় প্রশ্ন উঠেছিল। পরে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইউএই সফরের কারণে তারা অনলভ্য ছিলেন।

সান গ্রুপ ১,০৯৪ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের ১০০% মালিকানা কিনেছে। কাভ্যা মারানের নেতৃত্বে এই গ্রুপের আইপিএল ও এসএ২০-তে দল রয়েছে। এবার দ্য হান্ড্রেডে তাদের পদার্পণ ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, কারণ এটি ক্রিকেটে রাজনীতির প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে কিছু সমালোচক বলছেন, শুধু দুজন পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি পুরো চিত্র বদলাতে পারে না।

গত কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে। আইপিএলে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের নিষেধাজ্ঞা, বাই-ল্যাটারাল সিরিজ বাতিল—এসব নিয়ে বিতর্ক কম নয়। এবার দ্য হান্ড্রেডে তাদের অন্তর্ভুক্তি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিম উভয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তাদের চাহিদা এখনও বেশি। আমিরের সুইং বোলিং ও ইমাদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, অন্যান্য ভারতীয় মালিকানাধীন দলগুলো কি পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সুযোগ দেবে? বিশেষ করে এসএ২০ বা মেজর লিগ ক্রিকেটে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাণিজ্যিক স্বার্থই এখানে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। দর্শকদের আকর্ষণ ও ম্যাচের মান বাড়াতে স্টার খেলোয়াড়দের প্রয়োজন, যেখানে পাকিস্তানি তারকাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

নর্দার্ন সুপারচার্জার্সের এই সিদ্ধান্ত হয়তো ভবিষ্যতে আরও বেশি পাকিস্তানি খেলোয়াড়কে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সুযোগ পেতে সাহায্য করবে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই প্রক্রিয়াকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা দেখার বিষয়।

news