পুরুষ দলের পর এবার নারী দলের পালা! রোহিত-কোহলির দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর, এবার নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল হারমনপ্রিত কৌরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল তারা। শেফালি ভার্মা আর দীপ্তি শর্মার দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বিপর্যস্ত হয়েছিল প্রোটিয়া দল।
এই ফাইনালটা দুই দলের জন্যই ছিল ঐতিহাসিক হওয়ার সুযোগ। এর আগে কোনও দলই নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। মিতালি রাজের নেতৃত্বে ভারত দুইবার রানার্সআপ হয়েছিল। আর দক্ষিণ আফ্রিকা এবারই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল; টি-টোয়েন্টিতে দুইবার ফাইনালে হেরেছিল তারা। ফাইনালে লরা উলভার্ট একক সেঞ্চুরি করলেও, সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিন ফাইনালে হার তাদের 'চোকার্স' (বাছাই পর্বে বাদ পড়ার দল) তকমাই আবার মনে করিয়ে দিল।
বৃষ্টির কারণে নাভি মুম্বাইয়ে ফাইনাল ম্যাচ শুরু হতে বেশ দেরি হয়। টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে তারা গড়ে ২৯৮ রানের বিশাল স্কোর। এটাই নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ২৭৫ রানের বেশি রান তো দূরের কথা, ওয়ানডেতে এত বড় স্কোর কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তাড়ানো সম্ভব হয়নি। মিডল অর্ডার ও টেল-এন্ডারদের ব্যর্থতায় তারা ২৪৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও লরা উলভার্টের দারুণ সেঞ্চুরি (১০১ রান) শেষ পর্যন্ত বৃথাই গেল।
এই ঐতিহাসিক জয়ে ভারতের সবচেয়ে বড় হিরো ছিলেন শেফালি ভার্মা। প্রথমে দলেই জায়গা পাননি তিনি। সেমিফাইনালে প্রতিকা রাওয়ালের ইনজুরির সুযোগে দলে ঢোকার পরই ফাইনালে সর্বোচ্চ ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন শেফালি। শুধু ব্যাটিংই নয়, বল হাতেও ম্যাচ বদলে দেন তিনি। ৩১ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫টি উইকেট নেওয়া শেফালি ফাইনালের মতো চাপের ম্যাচেই কুড়ালেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
ভারতের জয়ের আরেক নায়ক দীপ্তি শর্মা। নারী বিশ্বকাপের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি একই আসরে কমপক্ষে ২০০ রান করেছেন এবং ১৫ উইকেট নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এই ডানহাতি স্পিনার, নেন ৫ উইকেট। এর আগে ব্যাট হাতে দীপ্তি করেছিলেন ৫৮ রান, যা ভারতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়া স্মৃতি মান্দানার ৪৫ ও রিচা ঘোষের ৩৪ রানের দ্রুত ইনিংসে ভারত ২৯৮ রানের টার্গেট তুলতে সক্ষম হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন আয়াবোঙ্গা খাকা।
বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভালোই শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাজমিন ব্রিটসের রানআউটের পর ৫১ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙে যায়। এরপর সুনে লুস (২৫) ও এনেরি ডার্কসেনের (৩৫) রান ছাড়া আর কেউই অধিনায়ক উলভার্টকে সঙ্গ দিতে পারেননি। একাই লড়ছিলেন প্রোটিয়া দলনেত্রী। দলের স্কোর ২২০ থাকতে সপ্তম উইকেট হিসেবে উলভার্টের আউট হলে ভারতের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে নাদিনে ডি ক্লার্ককে নিয়ে ভারতের কিছুটা শঙ্কা ছিল, কারণ লিগপর্বে তিনিই ভারতের জয় কেড়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তিনি আর সেই জাদু দেখাতে পারেননি, ১৮ রানেই ফেরেন পভিলিয়নে।
লরা উলভার্ট ৯৮ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন। নারী ও পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিলিয়ে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সেঞ্চুরি করা তিনি মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার। এর আগে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে উলভার্টের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অষ্টম সেঞ্চুরি এবং এক আসরে তার মোট ৫৭১ রান হয়তো তাকে কিছুটা সান্ত্বনা দেবে, কিন্তু প্রথম বিশ্বকাপ না জেতার ক্ষত তা কমাতে পারবে না।
