অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান! হারমনপ্রিত কৌরের নেতৃত্বে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল জয় করল ২০২৫ সালের আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। নাভি মুম্বাইয়ের ড. ডিওয়াই পাটিল স্পোর্টস একাডেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল ভারতীয় মেয়েরা।
এটাই ভারতের প্রথম নারী বিশ্বকাপ জয়—আর সেই অর্জনে ভেসে গেছে পুরো দেশ।
ভারতের বিশ্বজয়ের গল্প: ২৯৮ রানের পাহাড়, শেফালির ঝড়
দক্ষিণ আফ্রিকা টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। শুরু থেকেই দাপট দেখায় স্বাগতিকরা।
ব্যাট হাতে শেফালি ভার্মা খেলেছেন ইনিংসের সেরা পারফরম্যান্স—মাত্র ৭৮ বলে ৮৭ রানের দারুণ ইনিংস, যেখানে ছিল ৭টি চার ও ২টি ছক্কা।
তার সঙ্গে দীপ্তি শর্মা খেলেছেন ৫৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস, আর স্মৃতি মান্দানা (৪৫), রিচা ঘোষ (৩৪), জেমিমাহ রদ্রিগেজ (২৪) ও অধিনায়ক হারমনপ্রিত কৌর (২০) মিলে গড়েন শক্ত ভিত্তি।
নির্ধারিত ৫০ ওভারে ভারত তোলে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান, যা বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।
দীপ্তির ‘ফাইভ-উইকেট ম্যাজিক’, উলভার্টের সেঞ্চুরিও বৃথা
২৯৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ভেঙে দেয় ভারতীয় বোলাররা।
যদিও দলের একমাত্র আশার আলো ছিলেন লরা উলভার্ট, যিনি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি (১০১ রান) করেও দলের পরাজয় ঠেকাতে পারেননি।
বল হাতে দিনটা ছিল দীপ্তি শর্মার। তিনি একাই তুলে নেন ৫ উইকেট—যা তাকে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিয়েছে নারী বিশ্বকাপে এক আসরে ২০০ রান ও ১৫ উইকেট পাওয়া প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে।
এ ছাড়া শেফালি ভার্মা নেন ২ উইকেট, শ্রী চরানি নেন ১টি।
অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ২৪৬ রানে, আর ভারত পায় তাদের কাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ ট্রফি।
অশ্রুসিক্ত উদযাপন: রোহিত-হারমনপ্রিত-স্মৃতির চোখে জল
শেষ বল পড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা মাঠ। খেলোয়াড়দের আলিঙ্গনে ভেসে যায় নাভি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়াম।
গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পুরুষ দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, যিনি চোখের জল লুকোতে পারেননি।
মাঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন হারমনপ্রিত কৌর ও স্মৃতি মান্দানা—জয়ের আনন্দে, গর্বে, স্বপ্নপূরণের আবেগে।
দীনেশ কার্তিকের বিশ্লেষণ: “এই জয় অনুপ্রেরণা দেবে নতুন প্রজন্মকে”
স্কাই স্পোর্টসে ভারতীয় সাবেক উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিক বলেন,
“বিশ্বকাপ ফাইনাল এমন এক মঞ্চ, যেখানে স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ নেয়। আজকের এই জয় ভারতের প্রতিটি তরুণীকে অনুপ্রেরণা দেবে—তারা বল হাতে, ব্যাট হাতে স্বপ্ন দেখবে একদিন এমন জয়ের।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“২০১৭ সালে হারমনপ্রিতের ইংল্যান্ডে খেলা ইনিংস যেমন মানুষকে নারীদের ক্রিকেটে প্রেমে পড়িয়েছিল, আজকের জয় সেটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল। এই মেয়েরাই এক প্রজন্মকে বদলে দেবে।”
ভারতের এই জয় শুধু একটি ট্রফি নয়, এটি এক যুগান্তকারী মুহূর্ত—যেখানে নারী ক্রিকেট পেল তাদের প্রাপ্য মর্যাদা।
