সাবেক ভারতীয় ও বাংলার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দীপ দাশগুপ্ত দিয়েছেন মোহাম্মদ শামির দলে না-নেওয়া নিয়ে বিতর্কে নিজের যুক্তি। তিনি টেস্ট ক্রিকেটকে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে একদম আলাদা বলেছেন এবং প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরকে সমর্থন জানিয়েছেন। দাশগুপ্ত আবারও প্রশ্ন তোলেন শামির ফিটনেস নিয়েই।

ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি আর বর্তমান প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরের মধ্যকার এই টানাপোড়েন বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দল থেকে শামিকে বাদ পড়ার পর, এই বোলার নিজেই নির্বাচকদের কঠোর ভাষায় জবাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ফিটনেসের অভাব দেখিয়ে তাঁকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু গত কয়েক মাসে শামি তাঁর ফিটনেস প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার হয়ে খেলেছেন এবং দীর্ঘ স্পেল বোলিং করেছেন। এরপর সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ফিরে অনেক উইকেটও শিকার করেছেন। ২০২৫ সালে তিনি ৭ ম্যাচ খেলে ১৪ গড়ে ১৬ উইকেট নিয়েছেন।

দীপ দাশগুপ্তর ব্যাখ্যা: কেন বাদ শামি?

সাবেক বাংলার উইকেটরক্ষক দীপ দাশগুপ্ত পেসার মোহাম্মদ শামির দলে না-নেওয়া নিয়ে চলা জোরালো বিতর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানিয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী এই অভিজাত বোলার শেষবার ভারতের হয়ে খেলেছিলেন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, যেখানে তিনি যৌথ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন।

ইউটিউব চ্যানেল 'কাডাক'-এ কথা বলতে গিয়ে দীপ দাশগুপ্ত বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের মধ্যে বিশাল ফারাক আছে। তিনি দাবি করেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন বোলার তাঁর বোলিং স্পেল শেষ করে সাইডলাইনে বসে থাকতে পারেন, কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে সেটা হয় না। তিনি এ-ও বলেন যে শুধু বোলিং করাই ফিটনেসের প্রমাণ নয়।

দাশগুপ্ত বলেন, "দেখুন, টেস্ট ম্যাচের কথা যখন বলছেন, তখন তফাৎটা অনেক। আপনাকে মাঠে ৯০ ওভার থাকতে হবে, তিনটা স্পেল বোলিং করতে হবে, আর কেউ আপনাকে মাঠ থেকে বের হতে দেবে না। তাই ফিটনেসের কথা বলতে গেলে, সেটা শুধু বোলিং ফিটনেস নয়। এটা আমাদের একটু বুঝতে হবে, ঠিক আছে? ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেটে হতে পারে আপনি একটা স্পেল বোলিং করে গিয়ে বসে পড়লেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেউ আপনাকে সাইডলাইনে বসতে দেবে না।"

দাশগুপ্তর মতে: 'শুধু কম্পিউটার দেখে দল বাছাই হয় না!'

সাবেক এই ভারতীয় উইকেটর keeper বলেন, আসন্ন বিজয় হাজারে ট্রফিই এই তারকা পেসারের জন্য ফিটনেসের মান প্রমাণের একটা সুযোগ হয়ে দাঁড়াবে।

দাশগুপ্ত বলেন, "মানে, যদি কেউ ৫০ ওভার মাঠে থেকে তিন স্পেলে ১০ ওভার বোলিং করার জন্য যথেষ্ট ফিট থাকেন, তাহলে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ফিটনেসের হিসেবে বিজয় হাজারে ট্রফিটা গুরুত্বপূর্ণ হবে।"

এই উইকেটরক্ষকের মতে, মানুষ প্রায়শই ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে কে কত উইকেট নিয়েছে, কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান দেখে দল বাছাই হয় না। যদি হত, তাহলে তো নির্বাচকদেরই দরকার পড়ত না!

"সাধারণত সমস্যাটা হয়, আমরা একটা ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখি কে কত উইকেট নিয়েছে বা কে কত রান করেছে। সেটা একেবারে আলাদা ব্যাপার। যদি সেটাই হতো, তাহলে তো নির্বাচকদের দরকারই পড়ত না। আমরা শুধু একটা কম্পিউটার ব্যবহার করে দেখতে পারতাম, শীর্ষ চার উইকেট শিকারী কে আর শীর্ষ ছয় ব্যাটসম্যান কে, আর তাদের নিয়ে দল বানিয়ে ফেলতে পারতাম," - যোগ করেন তিনি।

'সংখ্যা ভুল বোঝাতে পারে': দাশগুপ্তের মূল্যায়নে গুণের উপর জোর

তিনি আরও দাবি করেন যে শুধু সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিচার করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। মোহাম্মদ শামির মতো অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বোলার তো চোখ বেঁধেও উইকেট নিতে পারেন! তাই শুধু উইকেট সংখ্যাই নির্বাচনের মাপকাঠি হওয়া উচিত নয়।

"তাই আমার মনে হয়, গুণমানটা দেখা জরুরি। কার বিরুদ্ধে পারফরম্যান্সটা এসেছে, আর সেটা কিভাবে এসেছে? বোলারটা কোন গতিতে বোলিং করছেন?" - বলেন দাশগুপ্ত।

তবে, দল নির্বাচনের আগে এই বিষয়টা ভেবে দেখতে হবে যে মোহাম্মদ শামি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় মানে বোলিং করছেন কিনা। যদি তিনি সেই স্তরের জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি এক ক্লাস আলাদা বোলার।

"কিন্তু আমার কথা হলো, শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করবেন না। অনেক সময় সংখ্যা ভুল বোঝাতে পারে," - এই বলে শেষ করেন দীপ দাশগুপ্ত।

 

news