দীর্ঘদিন ধরে ফিটনেস ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার পর আবারও ভারতীয় দলে ফেরার আলো দেখছেন মোহাম্মদ শামি। লক্ষ্য এখন ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিজ্ঞ এই পেসারকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন নির্বাচকেরা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তাঁকে দলে নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে শামি। সেই টুর্নামেন্টে তিনি ৯ উইকেট নেন, যার মধ্যে ছিল একটি পাঁচ উইকেটের কীর্তি। ভারতীয় দলের যৌথ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েও এরপর আর দলে সুযোগ না পাওয়ায় শুরু হয় নানা জল্পনা।
২০২৭ বিশ্বকাপ মাথায় রেখেই বিসিসিআইয়ের পরিকল্পনায় শামি
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নির্বাচকদের ভাবনায় এখনো রয়েছেন মোহাম্মদ শামি। অভিজ্ঞতা ও উইকেট নেওয়ার সক্ষমতার কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাঁকে দলে নেওয়া হতে পারে। এমনকি ২০২৭ বিশ্বকাপের দরজাও তাঁর জন্য বন্ধ হয়নি।
বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র এনডিটিভিকে জানায়,
“মোহাম্মদ শামিকে নিয়মিত আলোচনা করা হচ্ছে। তিনি এখনো নির্বাচনের বাইরে নন। একমাত্র চিন্তার জায়গা তাঁর ফিটনেস। তবে তাঁর মতো মানের বোলার উইকেট এনে দিতেই জানেন।”
সূত্রটি আরও যোগ করে,
“এটা বলা ভুল হবে যে তিনি নির্বাচকদের নজরের বাইরে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাঁর সুযোগ ভালোই আছে। অভিজ্ঞতা আর উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার কারণে তাঁকে নেওয়া হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এমনকি ২০২৭ বিশ্বকাপও একটি সম্ভাবনা।”
শামিকে না নেওয়ায় শুরু হয়েছিল বাছাই বিতর্ক
এর আগে ইংল্যান্ড সফরের টেস্ট সিরিজে শামিকে দলে নেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু ফিটনেসের কারণ দেখিয়ে নির্বাচকেরা তাঁকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ পেসারদের সুযোগ দেন। পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজ শেষ পর্যন্ত ২-২ ড্র করে ভারত।
এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ ও অস্ট্রেলিয়া সফরের সাদা বলের সিরিজ থেকেও বাদ পড়েন শামি। এ নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়। শামি প্রকাশ্যে জানান, তিনি পুরোপুরি ফিট এবং রঞ্জি ট্রফি ও সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে তাঁর পারফরম্যান্সই তার প্রমাণ।
এই পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার শামির মন্তব্যের জবাব দিয়ে নির্বাচকদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন, যা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।
নিউজিল্যান্ড সিরিজেই কি প্রত্যাবর্তন?
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজই হতে পারে শামির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মঞ্চ। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে জসপ্রিত বুমরাহকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে, এমনটাই ধারণা। সে ক্ষেত্রে ঘরের মাঠের সিরিজে ভারতের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে পারেন শামি।
সাম্প্রতিক ফর্ম ও দীর্ঘ আন্তর্জাতিক বিরতি
মোহাম্মদ শামি সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মার্চে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টেস্টে তাঁর শেষ ম্যাচ ছিল ২০২৩ সালের জুনে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে। আর সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক খেলেছেন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে আছেন শামি। বেঙ্গলের হয়ে বিজয় হাজারে ট্রফি ২০২৫–২৬ আসরে তিন ম্যাচে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সাত ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে এসেছে ১৬ উইকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে পেস আক্রমণে ছিলেন অর্শদীপ সিং, হর্ষিত রানা ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। ভিজাগে শেষ ম্যাচে প্রসিদ্ধ চার উইকেট পেলেও পুরো সিরিজে তাঁর পারফরম্যান্স খুব একটা নজরকাড়া ছিল না। সেখান থেকেই আবারও অভিজ্ঞ বোলারদের, বিশেষ করে শামির দিকে নজর ফিরেছে নির্বাচকদের।
