“ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দ্বিবার্ষিক বৈঠক এই বছরের মধ্যে আর হচ্ছে না। নতুন তারিখ নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে পরিস্থিতি এখনও স্পষ্ট নয়।”
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে দ্বিবার্ষিক বৈঠক এ বছর আর হচ্ছে না। এটি হবে প্রথম বৈঠক, যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবেদনে থাকছে বৈঠক পিছিয়ে যাওয়ার কারণ এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত।
“ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর দুইবার বিএসএফ ও বিজিবি প্রধানদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবছরের শেষ বৈঠকটি এখনও তারিখ চূড়ান্ত না হওয়ায় আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
এই বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরের ১৮ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশের বিজিবি তা এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেয়। পরে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বৈঠকের সম্ভাবনা থাকলেও দুই পক্ষই তারিখে একমত হতে পারেনি।”
“বৈঠকটি নিয়মিত হলেও এর গুরুত্ব অনেক। কারণ, এটি হবে বাংলাদেশে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রথম বৈঠক। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”
“গত আগস্ট থেকে বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে বিভিন্ন সীমান্ত ইস্যুতে মতবিরোধ বেড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তির গ্রেপ্তার, যাদের বিজিবি সশস্ত্র অপরাধী হিসেবে পরিচয় দেয়।
এছাড়াও, সীমান্তে বেড়া নির্মাণ নিয়ে বিজিবি আপত্তি জানিয়েছে। এসব ইস্যুতে বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও তারিখ চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।”
হিন্দুস্তান টাইমকে এক বিএসএফ অফিসার বলেন, “বিজিবি-র অনুরোধে বৈঠকটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বৈঠক করার। তবে, নতুন তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। সীমান্তের কিছু ছোটখাটো সমস্যা নিয়মিত বৈঠকে সমাধান হলেও বড় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।”
“তবে, সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষ। গত ২৫ ডিসেম্বর, বিএসএফ প্রধান দলজিৎ চৌধুরী উত্তরবঙ্গের সীমান্ত পরিদর্শন করেন। সেসময় বিজিবি-র কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা তাকে অভ্যর্থনা জানান।”
“বিএসএফ প্রধানের পরিদর্শনকালে উভয় পক্ষই সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগ সদস্য দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন থাকায় বৈঠক পিছিয়ে দিতে হয়েছিল।
সীমান্তে সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা ও সীমান্ত নির্মাণের মতো বিষয়গুলো বৈঠকে সমাধান হওয়ার কথা ছিল।”
“এই দ্বিবার্ষিক বৈঠকগুলো শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তখন থেকেই এটি দুদেশের সীমান্ত সম্পর্ক মজবুত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। ১৯৯৩ সালে এই বৈঠকগুলো নিয়মিত করা হয়, যা ঢাকায় ও দিল্লিতে পালাক্রমে অনুষ্ঠিত হয়।”
“সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা জটিল হয়েছে।
ভারত বারবার বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা বন্ধ করতে বলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এই বিষয়গুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি উভয় দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।”
“বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা নানা ইস্যুতে জটিল হয়ে ওঠে। এই বৈঠকগুলো কেবল সীমান্ত সমস্যার সমাধান নয়, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ দেয়।”


