দক্ষিণ এশিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ভারতের জন্য বড় মাথাব্যথা তৈরি করেছে। বিশ্ব শক্তি হিসেবে ওঠার পথে থাকা দেশটি স্বভাবতই প্রতিবেশী দেশগুলোর সমস্যা উপেক্ষা করতে পারে না।
চলতি মাসের শুরুতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারত। লক্ষ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন কমানো। তবে কে.পি. শর্মা অলি আকস্মিক বিক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ায় সফর সম্ভব হয়নি। তরুণ প্রজন্মের দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভই এই আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি।
এর আগে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশেও তরুণ নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান ঘটে। দক্ষিণ এশিয়ার এই অস্থিরতা ভারতের জন্য মাথাব্যথার কারণ। কারণ ভারতের প্রতিবেশীরা প্রায়শই অভিযোগ করে যে, কখনও তারা অবহেলা করা হয়, আবার কখনও নিজেদের স্বার্থে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ মাঝে মাঝে ভারতের উপর মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্ভরশীল থাকে। তবে ভারতের হস্তক্ষেপে তারা বিরক্তও হয়। প্রতিবেশী দেশে নেতৃত্বের শূন্যতা বা অনীহা ভারতের জন্য বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শূন্যতা চীনের প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করে। হিমালয় থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত চীনের বিনিয়োগ ইতোমধ্যেই ভারতের প্রভাব বলয়ে প্রবেশ করেছে। কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “ভারতের আত্মতুষ্ট হওয়া চলবে না। প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন হলেও তারা সবসময় ভারতের স্বার্থের সাথে মিলিত নাও হতে পারে।”
ভারত সবসময় ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ঘনিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ‘প্রতিবেশী-প্রথম’ নীতি তার কূটনীতির অন্যতম মূল দিক। দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের এক চতুর্থাংশ মানুষ বাস করে, যেখানে সবচেয়ে বড় তরুণ জনসংখ্যা রয়েছে। ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব দ্বারা চালিত।
ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিক গৌতম বাম্ভাওলে বলেন, “ভারতের বার্তা সহজ—আপনারা আমাদের সঙ্গে অংশীদার হলে আপনারা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারবেন।”
তবে প্রতিবেশীরা ভারতের পথ সবসময় মসৃণ করে দেয়নি। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা—সবই কখনও ভারতের বিরোধী, কখনও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। নেপাল যেমন চীনপন্থী নেতা অলি ছিলেন, তার উত্তরসূরি অন্তর্বর্তী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করেছেন।
নেপাল ও ভারতের সম্পর্ক সংস্কৃতিগতভাবে গভীর, সীমান্তও প্রায় এক হাজার মাইল। তবুও ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পর ভারত নেপালের পুনর্গঠনে বাধা দেয় এবং নতুন সংবিধান নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে।
বাংলাদেশেও ভারতের সমর্থন ও চীনের প্রভাবের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। মালদ্বীপের নির্বাচনে ভারতের ঋণ ও বাণিজ্য উদ্যোগ সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল। কুগেলম্যান বলেন, “এটি এক ধরনের ‘বারুদভর্তি কৌটো’, যেখানে সীমান্ত উত্তপ্ত, রাজনীতি বিভক্ত, জনগণ ক্ষুব্ধ এবং অর্থনীতি ভঙ্গুর।”
ভারতকে প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা নিতে হবে যাতে বাইরের চ্যালেঞ্জ অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত না করে।


