মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ লেবাননে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ বেশ আগে থেকেই চলছে। যার ফলে লেবাননের যেকোনো স্থানে প্রায়শই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা হয়ে থাকে। তবে এবার ২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ লেবাননের আকাশে ছিল অদ্ভুত এক নীরবতা। হঠাৎ সেই নীরবতা ভেঙে আকাশ ছিঁড়ে গর্জে ওঠে ইসরায়েলের একটি ড্রোন ও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র। 

সোজা আঘাত হানতে এগোতে থাকে একটি মোটরসাইকেলের দিকে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, ওই মোটরসাইকেলটিতে ছিলেন হিজবুল্লাহর একজন সদস্য, যাকে নির্ভুলভাবে টার্গেট করা হয়েছিল।

কিন্তু ঘটনাস্থলের কিছু গজ দূরেই দাঁড়িয়েছিল একটি মার্সিডিজ গাড়ি। আর ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র মোটরসাইকেলের পাশাপাশি উড়িয়ে দেয় পাশে থাকা ওই গাড়িটিকে। ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় চারটি ছিন্নভিন্ন দেহ, যার মধ্যে ছিলেন একজন পুরুষ ও তিনটি শিশু। এছাড়া গাড়ির পাশে গুরুতর অবস্থায় পড়েছিলেন একজন নারী। মোটরসাইকেল আরোহীও নিহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাড়িতে হামলার শিকার হওয়া তিন শিশু ও একজন পুরুষ ছিলেন মার্কিন নাগরিক। তাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে লেবাননের কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও জানা যায়, নিহতরা ছিলেন একই পরিবারের। মূলত, পরিবারটি লেবাননের একটি গ্রামে নিজেদের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তবে তাদের সেই সফর রূপ নেয় এক রক্তাক্ত ট্র্যাজেডিতে।

ভয়াবহ এই সামরিক হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এসেছে দ্রুত। একটি বিবৃতি পাঠিয়ে জানানো হয়, "আইডিএফ মূলত একটি হিজবুল্লাহ অপারেটিভকে লক্ষ্য করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়েকজন বেসামরিক হতাহত হয়েছেন।" এছাড়া ঘটনাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে এই হামলায় যে মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য কিংবা জবাবদিহি দেয়নি ইসরায়েল।

এই ঘটনায় নিহতরা শুধু বেসামরিক নন, বরং ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার নাবি পেরি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে নিহত পরিবারটি মার্কিন নাগরিক এবং শিশুদের হত্যা কেবল ভুল নয়, এটি একেবারে অমার্জনীয় অপরাধ। 

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম এই হামলাকে "নির্মম গণহত্যা" বলেছেন। তার ভাষায়, লেবাননের ওই গ্রামে ফিরে আসা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখাতেই ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, লেবাননের ওই ঘটনায় নিহতরা মার্কিন নাগরিক নন। যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতি যেন পুরো দৃশ্যপটকেই আরও বেশি রহস্যময় করে তুলেছে। প্রশ্ন উঠছে, একটি দেশ কীভাবে নিশ্চিত না হয়েই জানিয়ে দেয় নিহতরা তাদের নাগরিক নন।

news