রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ স্পষ্ট জানালেন, তার দেশের ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে আক্রমণ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে মস্কোর বিরুদ্ধে পরিচালিত যেকোনো "আগ্রাসন" হলে রাশিয়া কঠোর ও নির্ধারক জবাব দেবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া এক দীর্ঘ ভাষণে ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রায়ই হুমকি দিচ্ছে এবং সেটি এখন “ক্রমশ সাধারণ” হয়ে উঠছে।
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কড়া মন্তব্য
ভাষণে ল্যাভরভ ইসরায়েলকেও একহাত নেন। তিনি বলেন, রাশিয়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার নিন্দা করেছিল, তবে গাজায় ফিলিস্তিনিদের “নৃশংস হত্যাযজ্ঞ” কিংবা পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৫,৯২৬ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ৭ অক্টোবরের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।
ল্যাভরভ আরও অভিযোগ করেন, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোকেও টার্গেট করছে, যা গোটা অঞ্চলকে “বিধ্বস্ত” করার হুমকি দিচ্ছে।
ইরান ও নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ
ইরান ইস্যুতেও ল্যাভরভ পশ্চিমাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো কূটনীতিকে নাশকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শুক্রবার রাশিয়া ও চীনের উদ্যোগে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি জানান, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো “অবৈধ”। উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞাগুলো রবিবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা।
ইউরোপে উত্তেজনা বাড়ছে
ল্যাভরভ বলেন, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিকল্পনার অভিযোগ তুলে রাশিয়াকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবারই এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “রাশিয়ার কখনও এমন উদ্দেশ্য ছিল না এবং নেই। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসন হলে কঠোর জবাব আসবে।”
সম্প্রতি ডেনমার্ক অভিযোগ করেছে, তাদের আকাশসীমার উপর দিয়ে ড্রোন উড়েছে। তবে মস্কো সরাসরি দায় অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে এস্তোনিয়া অভিযোগ করেছে, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। পোল্যান্ডের ক্ষেত্রেও রাশিয়ান ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছে, যার জবাবে ন্যাটো বিমান প্রতিরক্ষা মিশন চালিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত বলেছেন, ন্যাটো দেশগুলোর উচিত তাদের আকাশসীমায় ঢুকে পড়া রাশিয়ান বিমান ভূপাতিত করা। ন্যাটোও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, প্রয়োজনে তারা আত্মরক্ষার জন্য সব ধরনের সামরিক ও অ-সামরিক পদক্ষেপ নেবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প সম্প্রতি নতুন সুরে কথা বলেছেন। তার মতে, কিয়েভ এখনো “সমস্ত ইউক্রেনকে তার আসল রূপে ফেরাতে সক্ষম”।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে ল্যাভরভ
ভাষণের শেষ দিকে ল্যাভরভ বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসন কেবল ইউক্রেন সংকট সমাধানে অনিচ্ছুক নয়, বরং বাস্তবসম্মত সহযোগিতা গড়ে তোলার পরিবর্তে আদর্শিক অবস্থান নিয়েছে।
পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ কিছু পশ্চিমা দেশের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সাম্প্রতিক স্বীকৃতি দেওয়ার সময় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তার অভিযোগ— এত দেরি করার কারণ সম্ভবত এটাই যে, তারা ভেবেছিল ফিলিস্তিনি জনগণ তখন আর বেঁচে থাকবে না, ফলে স্বীকৃতির কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।


