মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ পা রাখলেন জীবনের এক অসাধারণ মাইলফলকে—১০০ বছর বয়সে। তবে জন্মশতবর্ষেও তিনি যেন আগের মতোই ব্যস্ত, কর্মচঞ্চল আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অল্প খাবার খাওয়া, নিয়মিত কাজ করা এবং শরীর-মন সক্রিয় রাখাকেই দীর্ঘায়ুর আসল রহস্য হিসেবে মানেন তিনি। আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাহাথির বলেন, “আমি কখনো বিশ্রামে অভ্যস্ত হইনি। সবসময় কাজ করি, মস্তিষ্ক আর শরীরকে কাজে লাগাই। এটিই দীর্ঘায়ুর মূল চাবিকাঠি।”

জন্মদিনের দিনটিতেও তিনি ছিলেন স্বাভাবিক রুটিনে। রাজধানী কুয়ালালামপুরের দক্ষিণে পুত্রজয়ায় অফিসের টেবিলে বসে লিখেছেন মালয়েশিয়ার অর্থনীতি, রাজনীতি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। বিশেষ করে গাজা সংকট তাকে নাড়া দিয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গাজায় প্রায় ৬৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তিনি এটিকে ভয়াবহ গণহত্যা আখ্যা দিয়ে বলেন, “গর্ভবতী মা, সদ্যোজাত শিশু থেকে শুরু করে অসুস্থ, দরিদ্র—কাউকেই ছাড়ছে না ইসরাইল। এ ধরনের নির্মমতা শতাব্দীর পর শতাব্দী ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।”

মাহাথির গাজার পরিস্থিতির তুলনা টানেন বসনিয়ার মুসলিম হত্যাকাণ্ড ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি গণহত্যার সঙ্গে। বিস্মিত হয়ে তিনি বলেন, যারা নিজেরা গণহত্যার শিকার হয়েছেন, তারাই এখন অন্যদের ওপর একই বর্বরতা চালাচ্ছে। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে সরব থেকেছেন, যদিও এজন্য প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

রাজনীতিতে তার দীর্ঘ যাত্রা অনন্য। তিনবার হার্ট অ্যাটাক জয় করার পরও মালয়েশিয়ার দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২৪ বছরের ক্ষমতায় তিনি দেশকে কৃষিনির্ভর অবস্থা থেকে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে রূপ দেন। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদ শেষে, ২০১৮ সালে ৯২ বছর বয়সে আবারও প্রধানমন্ত্রী হন এবং ২০২০ সালে সর্বশেষ পদত্যাগ করেন।

চীন নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে মাহাথির বলেন, “৭০-এর দশকে চীন ছিল দরিদ্র। আজ তারা বৈদ্যুতিক গাড়িসহ নানা ক্ষেত্রে পশ্চিমকে টক্কর দিচ্ছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে।” একইসঙ্গে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, উৎপাদন ফিরিয়ে আনতে গেলে খরচ বেড়ে যাবে, ফলে বিশ্ববাজারে আমেরিকা টিকতে পারবে না।

আজও প্রতিদিন তিনি হাঁটেন, ব্যায়াম করেন, অফিসে যান, অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকেন এবং বিদেশ ভ্রমণ করেন। দীর্ঘায়ুর রহস্য নিয়ে মাহাথির বলেন, “শরীর ও মনকে সক্রিয় রাখো, বেশি খেও না। আর আমার মায়ের উপদেশ ছিল—খাবার যখন সবচেয়ে সুস্বাদু লাগে, তখন খাওয়া বন্ধ করো।”

news