মোটা টাকা জেতার লোভে সেলিব্রিটি, পেশাদার ক্রীড়াবিদ ও ধনী জুয়াড়িরা বসেছিলেন টেক্সাস হোল্ড 'এম পোকারের টেবিলে।

 কিন্তু তারা জানতেন না, জেতা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব!

তারা ছিলেন তথাকথিত "ফিশ", যাদের টার্গেট করেছিল মাফিয়া-নিয়ন্ত্রিত এক জটিল জুয়ার প্রতারণা চক্র। এই প্রতারণায় ব্যবহৃত হয়েছিল এক্স-রে কার্ড টেবিল, গোপন ক্যামেরা, চিপ ট্রেতে লুকানো বিশ্লেষক যন্ত্র, আর এমন সানগ্লাস ও কনট্যাক্ট লেন্স, যা দিয়ে অন্যের হাতের কার্ড দেখা যেত।

ওশানস এলেভেন সিনেমার মতো এই পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রসিকিউটরদের ভাষায়, "অবুঝ" খেলোয়াড়দের কাছ থেকে অন্তত ৭ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ৮৫ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতি খেলোয়াড় গড়ে হারিয়েছেন ১.৮ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা।

মার্কিন প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, একটি বিশাল ফেডারেল তদন্তে এই "হলিউড সিনেমার মতো" প্রতারণা চক্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ৩০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন লা কোস্ত্রা নোস্ত্রা মাফিয়া পরিবারের সদস্য, পোর্টল্যান্ড ট্রেইল ব্লেজার্সের কোচ চ্যান্সি বিলাপস এবং এনবিএর সাবেক খেলোয়াড় ডেমন জোন্স।

এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল এটিকে "বিস্ময়কর প্রতারণা" বলে উল্লেখ করেছেন। নিউ ইয়র্ক, মায়ামি, লাস ভেগাসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এই পোকার প্রতারণা মামলার পাশাপাশি বাস্কেটবল বেটিং স্কিমে আরেকটি মামলার কথা জানানো হয়। সেখানে পেশাদার এনবিএ খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে চোটের ভান করে বাজির ফলাফল প্রভাবিত করেছিলেন।

প্রসিকিউটরদের মতে, এই আন্ডারগ্রাউন্ড পোকার স্কিম শুরু হয় ২০১৯ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত মাফিয়া পরিবার—বনানো, গ্যাম্বিনো, লুচেসে ও জেনোভিজ—এটি পরিচালনা করছিল। প্রতারণার অর্থের একটি অংশ এই অপরাধী পরিবারের তহবিলে যেত।

প্রসিকিউটররা জানান, ভুক্তভোগীদের আকর্ষণ করতে সাবেক ক্রীড়াবিদদের "ফেস কার্ড" হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বিলাপস বা জোন্সের মতো সেলিব্রিটিদের সঙ্গে খেলার লোভ দেখিয়ে ধনী কিন্তু "অজ্ঞ" শিকারদের অবৈধ পোকার খেলায় নামানো হতো, যেখানে একটি টেবিলে লাখ লাখ ডলার ঘুরত।

অভিযোগে বলা হয়, "ফিশ" ছাড়া টেবিলের সবাই—খেলোয়াড় থেকে ডিলার পর্যন্ত—এই প্রতারণার অংশ ছিল। এমনকি কার্ড শাফলিং মেশিন ও চিপ কাউন্টারের মতো প্রযুক্তিও প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হতো।

ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে টেক্সাস হোল্ড 'এম খেলার সময় তথ্য আদান-প্রদান করা হতো। এক্স-রে টেবিল নিচের কার্ড পড়তে পারত, চিপ ট্রেতে লুকানো বিশ্লেষক যন্ত্র, রিগ করা শাফলিং মেশিন কার্ড স্ক্যান করে হিসাব করত কার হাতে সেরা কম্বিনেশন আসবে। বিশেষ সানগ্লাস ও কনট্যাক্ট লেন্স পরা খেলোয়াড়রা অন্যদের কার্ড "পড়তে" পারত।

কর্তৃপক্ষ জানায়, টেবিল ও লাইট ফিক্সচারে লুকানো গোপন ক্যামেরা প্রতারণার তথ্য পৌঁছে দিত। একটি অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা খেলা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হতো।

খেলার সময় তথ্য পাঠানো হতো একজন দূরবর্তী "অপারেটর" এর কাছে, যিনি তথ্য পাঠাতেন টেবিলে বসা আরেক সহযোগী "কোয়ার্টারব্যাক" বা "ড্রাইভার" এর কাছে। তিনি গোপনে অন্য খেলোয়াড়দের সংকেত দিতেন, যার ফলে ভুক্তভোগীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো এবং তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনাই থাকত না।

কর্তৃপক্ষের হিসাবে, প্রতিটি খেলায় একজন ভুক্তভোগী দশ হাজার থেকে কয়েক লাখ ডলার হারাতেন। অভিযুক্তরা এই অর্থ ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ লেনদেন ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছিল।

এই অবৈধ আয়ের একটি অংশ স্কিমে সহযোগীদের কাছে যেত, আর কিছু অংশ ইতালীয় মাফিয়ার অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হতো।

এফবিআইয়ের নিউ ইয়র্ক অফিসের সহকারী পরিচালক ক্রিস্টোফার রায়া বলেন, “এই স্কিম যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। কেউ খ্যাতি, কেউ অর্থনৈতিক সামর্থ্য ব্যবহার করে ইতালীয় মাফিয়াকে অর্থ জোগাচ্ছিল।”
বিলাপসকে পোর্টল্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনবিএ তাকে ছুটিতে পাঠিয়েছে। পোর্টল্যান্ড ট্রেইল ব্লেজার্স জানিয়েছে, তারা তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

জোন্সকে পোকার প্রতারণা ও ইনজুরি বেটিং স্কিমে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওয়্যার ফ্রড ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। একই অভিযোগে মায়ামি হিটের খেলোয়াড় টেরি রোজিয়ারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

news