রাশিয়ার ব্যাপক হামলায় ধসে পড়েছে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়, যার ফলে অন্ধকারে ডুবে গেছে বহু শহর ও অঞ্চল।
গতকাল শুক্রবার থেকে শনিবারের মধ্যে রাশিয়া শতাধিক ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর, যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় “শূন্যের কোঠায়” নেমে আসে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ‘ইউক্রেনএরগো’। সংস্থাটি ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার সতর্কতা দিয়েছে।
ইউক্রেনএরগো জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ অবকাঠামোর মেরামতকাজ চলছে, পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে সরবরাহের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী ভিতলানা গ্রিনচুক শনিবার জানান, কিয়েভ, নিপ্রোপেত্রাভস্ক, দোনেৎস্ক, খারকিভ, পলতাভা, চেরনিহিভ ও সুমি অঞ্চলে আংশিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরেছে, তবে সেখানে নিয়মিত লোডশেডিং চলবে।
স্থানীয় টেলিভিশন ইউনাইটেড নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রিনচুক বলেন,
“শত্রুরা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, যা প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এত বড় জ্বালানি অবকাঠামো হামলা আমরা দেখিনি।”
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিয়া জানান, রুশ ড্রোন হামলায় পশ্চিমাঞ্চলের দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ-এর হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সিবিয়া লিখেছেন,
“রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির জবাবে আমরা আইএইএ গভর্নর বোর্ডের জরুরি বৈঠক আহ্বান করছি।”
তিনি আরও আহ্বান জানান চীন ও ভারতের প্রতি, রাশিয়ার জ্বালানি তেলের বড় ক্রেতা হিসেবে মস্কোর ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এ ধরনের হামলা অব্যাহত থাকলে শীতের আগে ইউক্রেনের তাপ সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মক সংকটে পড়তে পারে।
দেশটির শীর্ষ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলেকজান্দ্রা খারচেঙ্কো বলেন,
“তাপমাত্রা যদি হিমাঙ্কের নিচে ১০ ডিগ্রিতে নেমে যায়, আর কিয়েভের বিদ্যুৎ ও তাপ কেন্দ্র তিন দিনের বেশি বন্ধ থাকে, তাহলে রাজধানীতে এক ধরনের ‘প্রযুক্তিগত বিপর্যয়’ ঘটতে পারে।”
