মহাকাশে এখন গুপ্তচরবৃত্তির নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। জার্মানি ও যুক্তরাজ্য সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, রাশিয়া ও চীনের মহাকাশ উপগ্রহগুলো এখন নিয়মিতভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর উপগ্রহের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার উপগ্রহগুলো পশ্চিমা উপগ্রহগুলোকে অনুসরণ, জ্যাম করা এবং হস্তক্ষেপ করার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস গত সেপ্টেম্বরে এক সম্মেলনে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "রাশিয়ার কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে মহাকাশে, আমাদের সকলের জন্য একটি মৌলিক হুমকি। এমন হুমকি যা আমরা আর উপেক্ষা করতে পারি না।"

এই হুমকি কতটা বড়?
যোগাযোগ উপগ্রহগুলো লক্ষ্য করলে স্যাটেলাইট ইমেজ, টেলিকম এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নেভিগেশন সিস্টেম ব্যাহত হলে সামরিক অভিযানের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচলও বিপদে পড়বে।

এই সতর্কতা আসে এমন সময়ে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে তৃতীয় বছরের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দাবি, মস্কো চীনের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়েছে, এবং বেইজিং ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড নজরদারিতে রাশিয়াকে সাহায্য করছে।

রাশিয়া কী করছে?
জার্মান মন্ত্রী জানান, দুটি রাশিয়ান গোয়েন্দা উপগ্রহ সম্প্রতি দুটি ইন্টেলস্যাট উপগ্রহকে অনুসরণ করছে, যা জার্মান সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের মিত্ররা ব্যবহার করে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, "রাশিয়া এবং চীন তাদের মহাকাশ যুদ্ধ ক্ষমতা দ্রুত প্রসারিত করেছে: তারা উপগ্রহ জ্যাম করতে, অন্ধ করতে বা ধ্বংস করতে পারে।"

যুক্তরাজ্যের স্পেস কমান্ড প্রধানও নিশ্চিত করেছেন যে রাশিয়ান উপগ্রহগুলো সাপ্তাহিকভাবেই ব্রিটিশ মহাকাশ সম্পদ জ্যাম করছে। মেজর জেনারেল পল টেডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, "তাদের পেলোড রয়েছে যা আমাদের উপগ্রহ দেখতে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম।"

চীন কতটা হুমকি?
বিশ্লেষকদের মতে, চীন রাশিয়ার চেয়েও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। যদিও রাশিয়ার নৈকট্য ইউরোপের জন্য বেশি চাপের, কিন্তু চীন অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করছে মহাকাশ প্রযুক্তিতে। চীন ইতিমধ্যেই রোবোটিক বাহু সহ উপগ্রহ পরীক্ষা করেছে, যা অন্যান্য উপগ্রহকে ভিন্ন কক্ষপথে সরিয়ে নিতে সক্ষম।

ইউরোপ কী করছে?
জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে মহাকাশ প্রকল্পের জন্য ৩৫ বিলিয়ন ইউরো বাজেট বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে। ব্রিটেনও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং লেজার সেন্সর পরীক্ষা করছে। ফ্রান্স 'দেহরক্ষী উপগ্রহ' মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে, যা অন্যান্য উপগ্রহ রক্ষা করবে।

ন্যাটো ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে মহাকাশ এখন তাদের কার্যক্ষেত্র এবং কোনো সদস্যের উপগ্রহে আক্রমণকে সকলের উপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়া ও চীনের মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোকে আরও দ্রুত এবং সমন্বিতভাবে এগোতে হবে, নাহলে মহাকাশে পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

 

news