দক্ষিণ মেরুর বরফে ঢাকা অ্যান্টার্কটিকা ভয়াবহ পরিবর্তনের মুখে পড়ছে—এ খবর নতুন নয়, তবে বিজ্ঞানীরা এবার সতর্ক করেছেন, এই পরিবর্তনের প্রভাব হতে পারে বৈশ্বিক ও মারাত্মক।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার পরিবর্তন শুধু ওই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে পুরো বিশ্বে জলবায়ু ও সমুদ্রপৃষ্ঠের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এএনইউ ও নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় ইউএনএসডব্লিউ-এর বিজ্ঞানীরা, অস্ট্রেলিয়ার সব প্রধান অ্যান্টার্কটিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এই গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তাদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ সাময়িকীতে।

গবেষক দলটি জানিয়েছে, অ্যান্টার্কটিকায় এখন একযোগে বহু বৃহৎ পরিবর্তন ঘটছে, যা একে অপরের সঙ্গে আন্তঃসংযুক্ত এবং এর ফলে জলবায়ু, সমুদ্রপৃষ্ঠ ও বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর তীব্র চাপ তৈরি হচ্ছে।

আঁতকে ওঠার মতো বার্তা বিজ্ঞানীদের

গবেষণায় বলা হয়েছে, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফচাদর ক্রমবর্ধমান কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কারণে ভেঙে পড়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। যদি এই বরফ সম্পূর্ণভাবে গলে যায়, তাহলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন মিটারেরও বেশি বাড়তে পারে, যা উপকূলীয় শহর ও জনবসতিকে মারাত্মক বিপদের মুখে ফেলবে।

গবেষণার প্রধান লেখক ও অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্টার্কটিক ডিভিশনের প্রধান বিজ্ঞানী ড. নেরিলি আব্রাম বলেন,

“এই পরিবর্তনগুলো আগামী প্রজন্মের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। অ্যান্টার্কটিকার বরফ, মহাসাগর ও বাস্তুতন্ত্রে ইতোমধ্যেই দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে—আর বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার প্রতিটি ডিগ্রির সঙ্গে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে।”

ড. আব্রাম আরও বলেন, অ্যান্টার্কটিক সমুদ্রের বরফ দ্রুত কমে যাওয়া আরেকটি বড় সংকেত। বরফ কমে যাওয়ায় বরফের তাকগুলো (Ice Shelves) ঢেউয়ের আঘাতে আরও সহজে ধসে পড়ছে, যা দক্ষিণ মহাসাগরকে আগে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

গবেষণার সহলেখক ও অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন অ্যান্টার্কটিক সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যাথিউ ইংল্যান্ড বলেন,

“অ্যান্টার্কটিকার এই দ্রুত পরিবর্তন অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভয়ানক প্রভাব ফেলবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, উপকূলীয় জনগোষ্ঠী হুমকির মুখে পড়বে। একই সঙ্গে দক্ষিণ মহাসাগর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা হারাবে, ফলে অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কার্বন নিঃসরণ কমানো না গেলে অ্যান্টার্কটিকার বরফ ধসে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র—আর তার পরিণতি হবে পৃথিবীর জলবায়ুর ওপর অপরিবর্তনীয় বিপর্যয়।

 

news