আসাম রাজ্য সরকার এবার আদিবাসী নাগরিকদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিচ্ছে। রাজ্যের 'ঝুঁকিপূর্ণ ও দূরবর্তী' অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের প্রথম ব্যাচকে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। রোববার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা।
এই ঘোষণাটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আসামে আগামী বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই বিশেষ প্রকল্পের আওতায় প্রথম দলটির লাইসেন্স ফেব্রুয়ারিতেই দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আমাদের কাছে অনেক আবেদন জমা পড়েছে। বর্তমানে আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি।" তবে তিনি স্পষ্ট করেই দিয়েছেন যে সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লাইসেন্স দেবে এবং সবারই আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হবে না। তাঁর ভাষায়, "সরকার অত্যন্ত বাছাই করে লাইসেন্স দেবে। সবাইকে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হবে না।"
এই উদ্যোগটি আসাম মন্ত্রিসভার গত মে মাসের একটি সিদ্ধান্তের ফলাফল। সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ভারতের আদিবাসী ও মূল অধিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা ঝুঁকিপূর্ণ ও দূরবর্তী এলাকায়, বিশেষত বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে বাস করেন, তাদের জন্য একটি বিশেষ স্কিম চালু করা হবে।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
হিমান্ত বিশ্ব শর্মা এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, "এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত। ধুবরি, নাগাঁও, মরিগাঁও, বরপেটা, দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর ও গোলপাড়া জেলার মতো এলাকায় বাংলাদেশি উৎসের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে আদিবাসীরা সংখ্যালঘু এবং তারা নিরন্তর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশেষত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।"
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, "এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ থেকে অথবা নিজেদের গ্রাম থেকেই হামলার শিকার হতে পারে।"
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন যে এই সিদ্ধান্তটি বিজেপির দীর্ঘদিনের অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ – তা হলো আসামের আদিবাসীদের 'জাতি, মাটি ও ভিটি' (পরিচয়, ভূমি ও আবাসভূমি) রক্ষা করা। তিনি জানান, এই দাবিটি ১৯৮৫ সাল থেকেই চলে আসছে, কিন্তু পূর্ববর্তী কোনো সরকারই তা পূরণ করেনি।
তিনি আরও যোগ করেন যে সরকার যোগ্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল নীতি গ্রহণ করবে, তবে শর্ত থাকবে যে আবেদনকারীদের অবশ্যই রাজ্যের আদিবাসী বা মূল অধিবাসী হতে হবে এবং তাদের ঝুঁকিপূর্ণ ও দূরবর্তী এলাকায় বসবাস করতে হবে।
