ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্ত সমর্থনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কিছু সদস্য প্রতিবাদ করলেও বাস্তবটা হলো—কংগ্রেস এখনো অনেকটাই ইসরায়েল এবং আমেরিকায় তাদের শক্তিশালী লবির প্রভাবে চলছে।
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৬ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউসে হনুক্কা উদযাপন অনুষ্ঠানে একটা বিতর্কিত মন্তব্য করে ইঙ্গিত দেন, ওয়াশিংটনে ইসরায়েলপন্থী লবির প্রভাব আগের মতো আর নেই। ট্রাম্প বলেন,“আপনি যদি ১০, ১২ বা ১৫ বছর আগের দিকে তাকান, তখন ওয়াশিংটনের সবচেয়ে শক্তিশালী লবি ছিল ইহুদি লবি—মানে ইসরায়েল। এখন আর সেটা সত্য নয়। আপনাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। আপনার সামনে এমন একটা কংগ্রেস আছে, যা ক্রমেই ইহুদি-বিরোধী হয়ে উঠছে।”
ট্রাম্পের এই কথা ইসরায়েলের কট্টর সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়ালেও, বিষয়টা গভীরভাবে বোঝার জন্য প্রথমে দেখতে হবে আমেরিকান সমাজের একটা বড় অংশে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন কেন কমছে। তারপর কংগ্রেসে ইসরায়েলপন্থী লবিস্টদের আসল অবস্থান কী, সেটা বিশ্লেষণ করা দরকার।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমেরিকানদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন স্পষ্টভাবে কমেছে। এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ডেমোক্র্যাট, তরুণ ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে।
২০২৫ সালের গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখেন, যেখানে রিপাবলিকানদের মধ্যে এই হার ৮৩ শতাংশ।
শিকাগো কাউন্সিলের জরিপে আমেরিকানদের গড় রেটিং ১০০-এর মধ্যে মাত্র ৫০—যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এই রেটিং নেমেছে ৪১-এ, আর প্রায় ৬০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল।
এই পরিবর্তনের পেছনে কয়েকটা বড় কারণ আছে। গাজা যুদ্ধের ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ, ধ্বংসস্তূপের ভয়ংকর ছবি, বিপুল বেসামরিক হতাহতের খবর—বিশেষ করে শিশুদের মৃত্যু এবং মানবিক সংকট—সোশ্যাল মিডিয়া আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যা জনমতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
এছাড়া ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের বসন্ত পর্যন্ত আমেরিকাজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আর রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। আমেরিকান কলেজ ক্যাম্পাসগুলো ফিলিস্তিনপন্থী বড় আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যেখানে পুলিশের দমনের দৃশ্যও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা পেয়েছে।
৩৫ বছরের কম বয়সী তরুণ আমেরিকান এবং প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার আর উপনিবেশবাদবিরোধী বিষয়ে বেশি সংবেদনশীল। তারা অনেকেই নেতানিয়াহু সরকারের নীতিকে বর্ণবাদ বা দখলদারিত্বের সঙ্গে তুলনা করছেন। একই সঙ্গে আমেরিকান রাজনীতিতে বাড়তে থাকা দলীয় বিভাজনও ইসরায়েল প্রশ্নে জনমত পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে।
