ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আবারও ইসরায়েলের কৌশলগত উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জুন মাসের সামরিক অভিযানের পরও তেহরান তার প্রধান সামরিক শক্তি দ্রুত পুনর্গঠন করছে, যা ভবিষ্যতে নতুন সংঘাতের পথ খুলে দিতে পারে।
‘আল-মনিটর’-এর তথ্য অনুযায়ী, জুনের যুদ্ধ সত্ত্বেও ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের বড় অংশ অক্ষত রয়েছে। বর্তমানে দেশটির কাছে প্রায় ২ হাজার ভারী ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই মূল্যায়ন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাঠিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াইনেট’ জানিয়েছে, নেসেটের একটা রুদ্ধদ্বার ব্রিফিংয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, যুদ্ধের প্রায় ছয় মাস পর ইরান আবারও বড় পরিসরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন শুরু করেছে।
ইউরেশিয়া গ্রুপের ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক গ্রেগ ব্রু বলেন, জুনের যুদ্ধের পর নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা পুনর্গঠন করা তেহরানের জন্য স্বাভাবিক পদক্ষেপ। তার মতে, ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করার তুলনায় ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বাড়ানোই এখন ইরানের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত লক্ষ্য।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুদ্ধের আগের তুলনায় দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি আরও বেড়েছে। একইসঙ্গে তেহরান প্রকাশ্যেই এই সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। গত সপ্তাহে পারস্য উপসাগরে আইআরজিসির নৌ-মহড়ায় ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সুইসাইড ড্রোন ব্যবহারের খবরও সামনে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখন মূল প্রশ্ন হলো—ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের এই পুনর্গঠন কতটা পর্যন্ত মেনে নেবে। গ্রেগ ব্রুর ধারণা, ইরান যদি এমন ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার গড়ে তোলে যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম, তাহলে আগাম প্রতিরোধমূলক হামলার পথ বেছে নিতে পারে তেল আবিব। তবে সে ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সমর্থন অপরিহার্য হবে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ফারজিন নাদিমির মতে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অন্তত ১৫টা প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প কমপ্লেক্স ও প্রায় ১৫টা ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, মাটির নিচে থাকা সুরক্ষিত টানেল ও অবকাঠামো দীর্ঘমেয়াদে ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
