অনেকের চোখে ইসরায়েল এখনো মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী ও বিজয়ী রাষ্ট্র। একসঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে লড়াই চালিয়ে তারা শত্রুপক্ষের বড় ক্ষতি করেছে—এমন দাবিও শোনা যায়। তার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও নেতাদের সমর্থনও এখনো ইসরায়েলের পাশে আছে।
কিন্তু ভেতরের চিত্রটা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। বাস্তবে ইসরায়েল ভিতর থেকেই দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে ইঙ্গিত মিলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি আন্তর্জাতিক জোট গাজাকে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই জোটে কাতার, মিসর, সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশ রয়েছে। একই সঙ্গে সিরিয়া ও লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতা সীমিত করতে চাপও বাড়ছে।
প্রকাশ্যে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করলেও অনেকের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নীরবে পুরো প্রক্রিয়াটিকে মেনে নিচ্ছেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন, সরাসরি যুদ্ধ চালানোর চেয়ে যুদ্ধের হুমকি বজায় রাখাই এখন তার জন্য বেশি লাভজনক।
এর বড় কারণ, নিজের ঘোষিত যুদ্ধলক্ষ্য পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা যায়নি, আবার জিম্মিদের জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও পারেনি ইসরায়েল। উল্টো ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় আগের হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি জিম্মি নিহত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে যে নিঃশর্ত সমর্থন ইসরায়েল এতদিন পেয়ে আসছিল, তা ধীরে ধীরে কমছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও আর আগের মতো দৃঢ় নেই। দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো গোষ্ঠী ও ফিলিস্তিনি আন্দোলনগুলোকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ইসরায়েলের চেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হতো।
কিন্তু এখন পশ্চিমা নেতাদের জন্য বিষয়টি অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। তারা দেখতে পাচ্ছেন, ইসরায়েল নিজেই ধীরে ধীরে আঞ্চলিক অস্থিরতার একটি উৎসে পরিণত হচ্ছে। সরাসরি তা স্বীকার না করে তারা নীরবে ও ধাপে ধাপে ইসরায়েলের ক্ষমতার লাগাম আলগা করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
এর ফলে একদিকে যেমন ইসরায়েলি নেতৃত্বকে প্রকাশ্যে অপমানের মুখে পড়তে হচ্ছে না, অন্যদিকে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতেও তারা বাধ্য হচ্ছেন। সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে মাঝেমধ্যে কেবল শীতল আচরণ করেই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব।
