প্রায় পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করে লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি পদত্যাগ করেছিলেন। জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে তিনি সরাসরি আশ্রয় নেন সৌদি আরবে। রিয়াদের কাছের এই নেতার দেশ ছাড়ার পর থেকে লেবাননের রাজনীতিতে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
সময় যত গড়িয়েছে, দেশটি উন্নতির পরিবর্তে যেন ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। এই কয়েক বছরে লেবানন দেখেছে ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকট, একটানা রাজনৈতিক অস্থিরতা আর আঞ্চলিক শক্তিগুলোর চাপ। একসময় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত লেবানন এখন পরিণত হয়েছে মহাশক্তিদের কৌশলগত খেলার মাঠে। অনেকের মতে, আঞ্চলিক ও বিশ্ব শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে লেবাননকে নতুন করে গড়ে তুলতে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে উঠেপড়ে লেগেছে।
এই পরিস্থিতিতেই লেবানন নিয়ে বড় সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে একটি আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হতে যাওয়া এই বৈঠকে যোগ দেবেন ফ্রান্স, সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকে মূলত লেবাননের সেনাবাহিনীকে সামনে রেখে তিন দেশের যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়, সেটাই থাকবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
পাশাপাশি একটি নতুন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা হবে। সূত্রগুলো বলছে, আলোচনায় লেবাননের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বাড়ানোর বিষয়টি
বিশেষ গুরুত্ব পাবে। দক্ষিণ লেবাননে সেনা মোতায়েনের কৌশল, সীমান্ত নির্ধারণ সংক্রান্ত মানচিত্র দেখানো এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় লেবাননের ভূমিকা—সবকিছুই আলোচনায় উঠবে। একই সঙ্গে সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়ার জন্য লেবানন কতটা 'সহযোগিতা' করছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে ইসরায়েল এবং লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে এক বছরের বেশি চলা সংঘাত বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তির পরও ইসরায়েল লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তেল আবিবের দাবি, প্রতিরোধ যোদ্ধারা যাতে নতুন করে সংগঠিত হতে না পারে, তাই এসব হামলা। যুদ্ধবিরতির পর লেবাননের কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও আন্তর্জাতিক চাপে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণে সম্মতি জানায় লেবানন। তবে বাস্তবে ছবিটা অন্যরকম। ইসরায়েল এখনও লেবাননের ভিতরে পাঁচটি কৌশলগত জায়গায় সেনা রেখেছে। অন্যদিকে প্রতিরোধ যোদ্ধারাও নিরস্ত্রীকরণের চুক্তি পুরোপুরি মানতে অস্বীকার করেছে।
