মাহী বি চৌধুরী বলেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২০১৮ সালে দলীয় আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে একটি ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমি উপলব্ধি করি, এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে আমার এবং বিকল্পধারার ভাবমুর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দলীয় নেতৃবৃন্দ ও বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৎকালীন বাস্তবতার বিচারে মহজোটে শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন।
                                                                           
                                                                    
                                    
তিনি বলেন, এই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় দলের মুখপাত্র হিসেবে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় বিকল্পধারার নিজস্ব অফিসে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে মাহী বি চৌধুরী একথা বলেন।
মাহী বি. চৌধুরী বলেন, পরিবর্তন প্রত্যাশী অনেক তরুণ এবং সংস্কারপন্থী নাগরিকরা আমার দলের, বিশেষ করে আমার এই পদক্ষেপকে সুবিধাবাদী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। যার ফলে আমার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা এবং দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। এই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায় দলের মুখপাত্র হিসেবে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। উপলব্ধি ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে এই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বিকল্পধারার আদর্শকে সমুন্নত করতে না পারলে আমি মনে করি বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারা তার প্রাসঙ্গিকতা হারাবে।
‘নির্ভীক সত্যানুসন্ধানে উপলব্ধি হয়েছে যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বিস্মিত করেছে এবং আমাদের স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচয় ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি আমাদের স্বচ্ছতা, গণতন্ত্র ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সর্বোপরি দলের আদর্শকে দুর্বল করেছে এবং পরিবর্তন প্রত্যাশী সমর্থকদের হতাশ করেছে’,বলেন তিনি।
বিকল্পধারার মুখপাত্র বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচন পরবর্তী খুব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে কোন আদর্শিক যোগাযোগ স্থাপন করা, একসঙ্গে পথচলা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ওই নির্বাচনের পর সরকারের পুরো মেয়াদে শাসক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিকল্পধারার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোন বৈঠক হয়নি। সরকারি বা প্রধানমন্ত্রীর কোন অনুষ্ঠানে বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিও ছিল না। তথাপি সরকারবিরোধী দৃঢ় অবস্থানে না যেতে পারার ব্যর্থতা আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি এবং আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ২০১৮ সালের ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংশোধনের প্রথম পদক্ষেপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ছিল ২০২৪-এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একমাত্র দল, যারা শাসকদল তথা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতার চেষ্টা করেনি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিজয় অর্জনের উদ্দেশ্য ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল বিকল্পধারা বাংলাদেশের স্বকীয় রাজনীতি ও নিজ আদর্শে ফিরে আসা। যে কারণে ২০১৮ সালের একতরফা প্রহসনমূলক নির্বাচনে অসম্মানজনক বিজয়ের চাইতে ২০২৪ সালের পরাজয় আমাদের কাছে অধিকতর সম্মানজনক ছিল।
মৃত্যুর তিন সপ্তাহ পূর্বে ১৬ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক বি. চৌধুরী ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি তা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
প্রজন্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতি ২০ বছর অন্তর গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।
দলীয় কাঠামোয় বিকল্পধারা হবে সিঙ্গেল ইউনিট পার্টি। যেখানে ব্যক্তিতান্ত্রিক নেতৃত্বের ঊর্ধ্বে উঠে বিকল্পধারায় সমন্বিত ও যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে কর্মসূচিভিত্তিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
৩টি দর্শনের ভিত্তিতে বিকল্পধারা পরিচালিত হবে। বিকল্প রাজনীতির দর্শনকে সবসময় প্রজন্মের সাথে প্রাসঙ্গিক রাখতে হবে।
১ম দর্শন হবে আধ্যাত্মিকতা/ রুহানিয়াত হবে বিকল্পধারার দর্শনের মূলভিত্তি। স্রষ্টা ও সৃষ্টির সাথে সংযোগ স্থাপন, নির্ভয় সত্যানুসন্ধান এবং অহঙ্কার থেকে মুক্তি অর্জনের চেষ্টার মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করতে হবে।
২য় দর্শন হবে প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে ও চূড়ান্ত গন্তব্য হবে সামষ্টিক জাতীয় সুখ বা Gross National Happiness, (GNH)
রাজপথে নূন্যতম দৃশ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে বিকল্পধারা।
সব পর্যায়ে এবং সকল ক্ষেত্রে বিকল্পধারার রাজনৈতিক ভাষা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিময় ও সম্মানজনক।
বিকল্পধারা হবে অহিংস ও রক্তপাতহীন কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সংগঠন। প্রজন্মের কাছে বিকল্পধারাকে উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ এবং নান্দনিক ধারার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। বিকল্পধারাকে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা এবং নেতৃত্ব দিতে হবে।
বিকল্পধারা হবে নিজস্ব উপার্জিত অর্থে পরিচালিত একটি দল। শুধুমাত্র দলীয় সদস্যদের থেকে অনুদান গ্রহণ করা যাবে।
বিকল্পধারা বিশ্বাস করবে সর্বময় ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। শুধুমাত্র সামষ্টিকভাবে রাষ্ট্রের জনগণ এই ক্ষমতা উপভোগ করবে। সরকার শুধুমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। সব ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক বক্তব্য নিষিদ্ধ থাকবে। কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার পেশিশক্তি অথবা ক্ষমতার প্রদর্শন থাকবে না বিকল্পধারায়।
দলের যেকোন পদ বা পর্যায়ে নেতৃত্ব গ্রহণ যোগ্যতার ভিত্তিতে, গণতান্ত্রিক পন্থায় সব সদস্যের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত থাকতে হবে। বিকল্পধারায় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির কোন সুযোগ থাকতে পারবে না।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            