বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। গত নভেম্বরে সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সালাহউদ্দিন পরবর্তীতে ব্যাটিং কোচের দায়িত্বও পান। কিন্তু গত নয় মাস ধরে দলের দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে তার উপর চাপ বাড়ছে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, "আমি মনে করি আমাদের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ভালো কাজ করছেন। তবে সিরিজ চলাকালে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। সিরিজ শেষে আমরা মূল্যায়ন করব।" তিনি আরও যোগ করেন, "ব্যাটিং একটি শেখার বিষয়। ঘরোয়া ক্রিকেট, বিভিন্ন পিচের অভিজ্ঞতা, কাঠামোগত ব্যবস্থাপনা—এসব মিলিয়ে ব্যাটিং চ্যালেঞ্জিং। কোচদের ভূমিকা চিকিৎসকের মতো। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান দিতে হয়।"

বিসিবি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের কয়েক দিন আগেই প্রধান সিলেক্টর গাজী আশরাফ হোসেন প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে বোর্ড একটি নতুন ব্যাটিং কোচ নেয়ার কথা ভাবছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সালাহউদ্দিনকে প্রতিস্থাপন করা হতে পারে।

এদিকে, কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের নির্ধারিত টি২০আই ম্যাচের আগে এক প্রেস কনফারেন্সে সালাহউদ্দিন সরাসরি এই ইস্যুতে কথা বলেন। তিনি বলেন, "আমি একজন কোচ। আমাকে যদি অনূর্ধ্ব-১৩ দলকে কোচিং করতে বলা হয়, তাতেও আমার কোনো সমস্যা নেই। জাতীয় দলের কোচ হওয়া আমার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যদি কেউ ভালো কোচ আসেন, সেটা দলের জন্যই ভালো। বাংলাদেশ দল আমার বাবার বা দাদার সম্পত্তি না।"

তিনি আরও বলেন, "খারাপ ফলাফলের জন্য আমি সমালোচিত হব, ভালো করলে প্রশংসা পাব। এটাই বাস্তবতা। আমি দলের জন্য শতভাগ দিয়েছি কিনা, সৎ আছি কিনা—সেটাই প্রধান বিষয়।"

সাম্প্রতিক মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে সালাহউদ্দিন দলের সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রভাব রাখেন, এমনকি খেলোয়াড় নির্বাচন ও ভূমিকা নির্ধারণেও তার হাত রয়েছে। তিনি শাকিব আল হাসানের মতো বেশ কয়েকজন প্রধান খেলোয়াড়ের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রাখেন এবং দলে একজন পরামর্শক হিসেবে বিবেচিত হন। তবে তিনি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি বলেন, "২৭-২৮ বছর কোচিং করার পর এখন শুনছি যে দলে আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি জানতে চাই, সেই অভিযোগগুলো কী? লিখিতভাবে জানালে ভালো হয়। প্রমাণ দিতে হবে। এতে আমি নিজেকে সংশোধন করতে পারব।"

তিনি আরও বলেন, "দল নিয়মিত হারছে, তাহলে পক্ষপাতিত্ব করে আমার লাভ কী? যদি কেউ প্রমাণসহ অভিযোগ করে, আমি সেটা মেনে নেব। কিন্তু অপ্রমাণিত কথা বলা উচিত নয়।"

সালাহউদ্দিন আরও স্পষ্ট করে বলেন, "আমি মানসিকভাবে শক্ত। নাহলে অনেকেই এতদিনে ভেঙে পড়তেন। আমার এই চাকরি করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমি এখানে আছি কারণ ভেবেছিলাম দলকে কিছুটা হলেও উন্নত করতে পারব।"

তিনি জানান, যদি তিনি ভালো কোচ না হন, তাহলে তাকে সরিয়ে দেয়ায় তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বিনা প্রমাণে সমালোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।

সালাহউদ্দিন বাংলাদেশে স্থানীয় কোচদের জন্য একটি নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার আশা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বিসিবির ধৈর্য এখন ফুরিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হারার পর খালেদ মাহমুদকে যেমন সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, সালাহউদ্দিনের ভাগ্যেও কি তা-ই অপেক্ষা করছে?

প্রায় তিন দশক ধরে খেলোয়াড় গড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে সালাহউদ্দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নেন। ফিল সিমন্সের সহকারী হিসেবে তার ভূমিকা কতটা কার্যকর হয়েছে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। তাকে সময় দেয়া হবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অনিশ্চিত। খবর ক্রিকবাজের

news