হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা অভিনেতা, শক্তি এবং আবেগের প্রতীক ধর্মেন্দ্র সোমবার (২৪ নভেম্বর) মুম্বাইয়ে ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। কিংবদন্তি এই অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন এবং গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল।
তাঁর এই মৃত্যুতে বিনোদন জগৎ, পুরো দেশ এবং পাকিস্তানসহ বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত শোকস্তব্ধ। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বলিউড ব্যক্তিত্ব এবং এমনকি শীর্ষ ক্রীড়াবিদদের কাছ থেকেও ধর্মেন্দ্রর জন্য শ্রদ্ধার্ঘ্য ও শোকবার্তা আসছে, যা প্রমাণ করে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি মানুষের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছিলেন।
ধর্মেন্দ্রর অবিস্মরণীয় অভিনয়—যা আয়ে মিলন কি বেলা, ফুল অউর পাথর, আয়ে দিন বাহার কে, সীতা অউর গীতা, রাজা জানি, যুগনু, ইয়াদোঁ কি বারাত, দোস্ত, শোলে, প্রতিজ্ঞা, চাড়াস এবং ধরম বীরের মতো ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলোতে দেখা গেছে—তা লক্ষ লক্ষ মানুষের শৈশব এবং স্মৃতিকে নতুন করে সাজিয়েছিল।
অনেকের কাছেই ধর্মেন্দ্র দেওল বড় পর্দায় বীরত্ব, রোমান্স এবং নির্ভেজাল আবেগের মুখ ছিলেন। এই আইকনিক অভিনেতার মৃত্যুর খবর সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানেও পৌঁছেছে। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ বর্ষীয়ান এই অভিনেতার প্রতি তাঁর আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বলেছেন কীভাবে ধর্মেন্দ্রর সিনেমা ও আকর্ষণ তাঁকে উপমহাদেশ জুড়ে প্রিয় তারকায় পরিণত করেছিল।
আইএএনএস-কে উদ্ধৃত করে রশিদ লতিফ বলেন: “ধর্মেন্দ্র জি ছিলেন একজন কিংবদন্তি নায়ক, এবং শোলে একটি সর্বকালের ক্ল্যাসিক সিনেমা হয়ে থাকবে। তিনি উপমহাদেশ জুড়ে একটি অসাধারণ উত্তরাধিকার রেখে গেছেন এবং পাকিস্তানেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। আমার গভীর সমবেদনা রইল।”
এদিকে, ভারতের ক্রিকেট সুপারস্টার বিরাট কোহলিও একটি আবেগপূর্ণ পোস্টের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি ধর্মেন্দ্রকে একজন 'সত্যিকারের আইকন' হিসেবে অভিহিত করেন, যাঁর ক্যারিশমা পর্দায় প্রতিটা ফ্রেমে উজ্জ্বলতা এনে দিত। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে অভিনেতার কাজ কয়েক দশক ধরে দর্শকদের কতটা গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে।
কোহলি 'X'-এ (সাবেক টুইটারে) পোস্ট করেন: “আজ আমরা ভারতীয় সিনেমার একজন কিংবদন্তিকে হারালাম, যিনি তাঁর আকর্ষণ এবং প্রতিভা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। একজন সত্যিকারের আইকন, যিনি তাঁকে দেখা প্রত্যেককে অনুপ্রাণিত করেছেন। এই কঠিন সময়ে পরিবার যেন শক্তি খুঁজে পায়। পুরো পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা।”
কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর জন্য শচীন টেন্ডুলকারওএকটি হৃদয়স্পর্শী পোস্ট শেয়ার করেছেন। টেন্ডুলকার 'X'-এ লেখেন: “অন্যান্য অনেকের মতো, আমিও অভিনেতা ধর্মেন্দ্র জির প্রতি তাৎক্ষণিক আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম, যিনি তাঁর বহুমুখী অভিনয় দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছেন। পর্দায় সেই বন্ধন আরও দৃঢ় হলো যখন আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম।”
কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার আরও যোগ করেন, “তাঁর (ধর্মেন্দ্রর) এনার্জি ছিল অবিশ্বাস্যভাবে সংক্রামক, এবং তিনি সবসময় আমাকে বলতেন, 'তুমকো দেখকার এক কিলো খুন বাড় যায়েগা মেরা'। তাঁর মধ্যে একটি সহজাত উষ্ণতা ছিল, যা তাঁর চারপাশের সবাইকে মূল্যবান ও বিশেষ অনুভব করাত। তিনি মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন, সেটা জানার পর তাঁর ভক্ত না হয়ে থাকা অসম্ভব। আজ তাঁর প্রয়াণে আমার বুক ভারী লাগছে। 'অ্যায়সা লাগতা হ্যায় জ্যায়সে মেরা ১০ কিলো খুন কম হো গয়া হ্যায়'। আপনাকে খুব মিস করব।
ধর্মেন্দ্রর যাত্রা তাঁর অভিনয়ের মতোই অনুপ্রেরণামূলক। ১৯৩৫ সালে পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া এই বলিউড আইকন সিনেমার জৌলুস থেকে অনেক দূরে বেড়ে উঠেছিলেন। তাঁর জীবন পাল্টে যায় ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন ফিল্মফেয়ার পত্রিকা এবং বিমল রয় প্রোডাকশনস হিন্দি সিনেমার নতুন মুখ আবিষ্কারের জন্য দেশব্যাপী একটি প্রতিভা সন্ধান শুরু করে।
ধর্মেন্দ্র ১৯৫৮ সালে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং বিজয়ী হন। তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং সহজাত স্ক্রিন উপস্থিতি তাঁকে স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয় এবং দ্রুতই তিনি দেশের অন্যতম বড় তারকায় পরিণত হন। তিনি যে উত্তরাধিকার রেখে গেলেন, তা চিরকাল বেঁচে থাকবে।
