দিল্লিতে জন্ম নেওয়া এক ভারতীয় ক্রিকেটার—যিনি একসময় শুভমন গিলের সতীর্থ ছিলেন—অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে তৈরি করলেন ইতিহাস। চলমান শেফিল্ড শিল্ডে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে তিনি এই শতকে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম-শ্রেণির ম্যাচে শতরান করলেন।

ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিদেশে গিয়ে খেলার ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না। উন্মুক্ত চাঁদ যেমন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়েছেন, তেমনই আরও কিছু ক্রিকেটার নিজেদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
এদের মধ্যে অনেকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত নন—বরং সরাসরি ভারতেই জন্ম, তারপর অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া ক্রিকেটার।

যখন গুয়াহাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মার্কো ইয়ানসেন একাই ভারতের ইনিংস ধ্বংস করে দিলেন, ঠিক তখন ভারতের হাজার মাইল দূরে এক সাবেক পাঞ্জাব ক্রিকেটার নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য তুলে নিলেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।

শেফিল্ড শিল্ডে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে তাসমানিয়ার হয়ে খেলতে নেমে নখিল চৌধুরী খেললেন ঝলকানো ১৬৩ রানের ইনিংস।
এই ইনিংসের মাধ্যমে তিনি হলেন শেফিল্ড শিল্ড ইতিহাসে প্রথম ভারতজন্ম ক্রিকেটার যিনি শতরান করলেন।
তাসমানিয়া ৬২৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে—যা প্রতিযোগিতার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।

দিনের শুরুটা করেছিলেন ক্যালেব জুয়েল সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে। এরপর উইকেটে এসে টিম ওয়ার্ড এবং নখিল চৌধুরী জুটি গড়ে খানিকটা সময়েই তাসমানিয়ার ইনিংসকে পাহাড়সম বড় করে তোলেন।

তাসমানিয়ার দুই ব্যাটার—ওয়ার্ড ও চৌধুরী—দুজনেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। এরপর নিউ সাউথ ওয়েলসের স্যাম কনস্টাস ও রায়ান হিক্স দিনশেষের পাঁচ ওভার অতিক্রম করে কোনো বিপদ ছাড়াই স্টাম্পস পর্যন্ত দলকে নিয়ে যান।

দিল্লিতে জন্ম নেওয়া নখিল প্রথমে পাঞ্জাবের হয়ে একদিনের ক্রিকেট খেলেছিলেন। তিনি শুভমন গিল, অভিষেক শর্মা ও অর্শদীপ সিংয়ের সঙ্গেও খেলেছেন।
২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেওয়ার পর কোভিড-১৯ লকডাউনে দেশে ফিরতে না পেরে থেকে যান সেখানে। ক্রিকেট স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন রকম কাজ করতে হয়েছে তাকে—মাংস কাটার কাজ, পার্সেল ডেলিভারি, এমনকি উবার চালানোও।

বিগ ব্যাশ লিগে হবাট হারিকেন্স দলে সুযোগ পেয়ে আলোচনায় আসেন নখিল। পাকিস্তানের পেস তারকা হারিস রউফকে ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।

হবাটের হয়ে দারুণ মৌসুমের পর হঠাৎই শেফিল্ড শিল্ড দলে ডাক পান—ম্যাথিউ কুহনেম্যান জাতীয় দলে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে।
ডাক পাওয়ার পরই জাতীয় নির্বাচক জর্জ বেইলির নজরে পড়েন তিনি, যখন তার সামনে খেলেন ৭৬* রান—যা ম্যাচ বাঁচিয়ে দেয় তাসমানিয়ার জন্য।

নখিল চৌধুরীর এই সেঞ্চুরি এখন শুধু রেকর্ড নয়—প্রবাসে সংগ্রাম করা এক ভারতীয় ক্রিকেটারের অনুপ্রেরণার গল্পও।

news