বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মূল হোতাদের নাম বাদ দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) চাপ দিয়েছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু এতে রাজি না হওয়ায় মাশুল গুণতে হয় সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তাকে। বদলি করা হয় তাকে। সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্ব ব্যাংকিং ইতিহাসে কুখ্যাত এক চুরির ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হাওয়া হয়ে যায় কর্পুরের মত। কিন্তু সে ঘটনার কোনো কুল কিনারা হয়নি ৮ বছরেও। তবে গেল ২০২০ সালে এই তদন্ত প্রতিবেদনে দেশিয় কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট চূড়ান্ত করে সিআইডি। তখন তা আটকে দেন আওয়ামী লীগ সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী আনিসুল হক ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। রিজার্ভ চুরি নিয়ে এক বৈঠক থেকে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধমক দিয়ে বের করে দেয়া। সেই বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা এটি নিশ্চিত করেন।
কেন এভাবে দুই মন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত আটকে দেয়া হয় তা জানা দরকার বলে মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিআিইডি তদন্ত করেছে। এখন পর্যন্ত ৭৯বার সময় নিয়েছে কিন্তু চার্জশিট দেয়া হয়নি। শোনা যায় তৎকালীন আইনমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাপ দিয়েছিল যেনো কোনো চার্জশিট না দেয়া হয় আর কোনো বাংলাদেশিকে যেনো এখানে যুক্ত না করা হয়।
সিনিয়র আইনজীবী আরও বলেন, চার্জশিট জমা না দেয়া কার স্বার্থে এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তাদের কাছেই জানতে হবে সিআইডি চার্জশিট তৈরির পরেও কেনা দিতে পারেনি আর তাদের কেনো চাপ দেয়া হয়েছে।
তবে সাধারণ আইনজীবীদের মত, সে সময় দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ মামলায় আসামি করা উচিত। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব টাকা ও ভোল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি করেছে তা ফিরিয়ে আনা দরকার। আর যদি এটি ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে এসব চুরির সঙ্গে কারা জড়িত ছিল তাদের ধরা উচিত। এবং বিচার করা দরকার।
এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, এর জন্য দায়বদ্ধ বাংলাদেশের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর। একটি তদন্ত কিন্তু হয়েছে এটি কিন্তু জনসম্মুখে দেখতে চাই। এবং অপরাধী যারা তাদের গ্রেপ্তার করে অতি শিগগিরিই বিচারের মুখোমুখি করা দরকার।
রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সবশেষ জুলাই মাসে যে বৈঠক হয় সেখানে দেশিয় যারা জড়িত তাদের নাম বাদ দিতে বলা হয়েছে। তবে সিআইডি তাতে রাজি হয়নি। তবে কবে নাগাদ চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসে সেটিতে নজর থাকবে সবার।