রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিএিপির নেতারা ইতোমধ্য দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। কেউ কেউ রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তাতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। এতে করে নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে। যেটা বিএনপি চাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে হুট করে কিংবা তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি।

কেউ কেউ বলছেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়াই উত্তম। তবে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে হলে জাতীয় ঐকমত্যের দরকার বলেও মনে করে বিএনপি। তবে দলটির প্রশ্ন, রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়ার পর কে হবেন নতুন রাষ্ট্রপতি?

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও বুধবার বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকবেন কী থাকবেন না, এ প্রশ্নটি এই মুহূর্তে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’ তিনি বেশ পরিষ্কার করেই বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির পদটা সাংবিধানিক পদ। এ পদে হঠাৎ করে শূন্যতা রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যদি গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত হয়, তা জাতির জন্য কাম্য নয়।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের দেশ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে যে উদ্যোগ চলছে, তা আমরা পর্যালোচনা করছি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাব।’

এদিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।  বৃহস্পতিবার এই আলটিমেটামের সময় শেষ হয়। এর মধ্যে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে একটি দাবি পূরণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতিসহ চারটি দাবি এখনো পূরণ হয়নি। 

রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির দাবির প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার নমনীয় থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যের কারণে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কিংবা পদচ্যুতি কোনোটাই ঘটেনি। তাই মতানৈক্য দূর করতে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটির মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ। সংলাপের পরও এ সিদ্ধান্তে ঐকমত্য না হলে রাজপথে মোকাবিলা করার কথা জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতিসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। দাবিগুলো হলো বাহাত্তরের সংবিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করে সেই জায়গায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লেখা, এ সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে এ সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করা, জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের ‘স্পিরিটের আলোকে’ এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে ‘প্রক্লেমেশান অব রিপাবলিক’ ঘোষণা এবং গত তিনটি নির্বাচন ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা। এর মধ্যে গত বুধবার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাষ্ট্রপতির অপসারণে আলটিমেটাম ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আব্দুল হান্নান মাসুদ  গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। আমরা এখন তাদের সঙ্গে কথা বলব। তারা কেন রাষ্ট্রপতিকে রাখতে চাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমরা বসব। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কাউকে এ সংলাপে আমরা রাখব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম অংশ। বিএনপি কেন বিরোধিতা করছে আমরা জানি না। তারা যেহেতু পুরনো দল। সংকট সম্পর্কেও তারা ভালো জানতে পারেন। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের অফিশিয়াল বক্তব্য আমরা জানতে চাইব। 

আব্দুল হান্নান বলেন, ‘আমরা মনে করি না রাষ্ট্রপতিকে সরাতে কোনো সংকট আছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করতে হবে, এটা জাতির কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি। আমরা চাচ্ছি সবাইকে নিয়েই তা করতে। কেউ যদি আসতে না চায় সে ক্ষেত্রে আমরা সেটি রাজপথে মোকাবিলা করব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির প্রশ্নে একটা জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেজন্য আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। আশা করি তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত আসবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘হাসিনা ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ এখনো বিরাজমান। ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনো অংশ বাংলাদেশে আমরা বিরাজমান দেখতে চাই না। এই ফয়সালা রাজনৈতিক দলগুলোকে করতে হবে।

news