বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন সবার থেকে আলাদা বলা হয়, তা ৫ আগস্টের পর দেওয়া তাঁর ভাষণ দেখলেই বোঝা যায়—এমন মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে শোক বইয়ে সই করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামের ইতিহাস দেখলে ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকেই সামনে আনতে হবে। এই অবস্থানে পৌঁছানো সহজ ছিল না, দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রাম করেই তিনি এটা অর্জন করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

এ সময় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা নিজেরাই গভীর শোকে ভেঙে পড়েছি। মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ আজ এতিম হয়ে গেছে। দেশের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি।”

ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, “সবকিছুর পরও সবচেয়ে বড় সান্ত্বনার বিষয় হলো—বাংলাদেশের মানুষ তাকে কতটা ভালোবাসেন ও সম্মান করেন, সেটা তিনি নিজের চোখে দেখে যেতে পেরেছেন। গণতন্ত্রের নতুন যাত্রার সময় তাকে পাশে পেলে আরও ভালো লাগত। দেশের মানুষের জন্য তিনি যা করে গেছেন, আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন।”

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা কেউই বিশ্বাস করতে পারিনি যে আজ এই মহান নেত্রীর বিদায় দেখতে হবে। এই ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়। তবে সবার সম্মিলিত শক্তিতে আমরা চেষ্টা করব—বেগম খালেদা জিয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক এবং মানুষের অধিকারভিত্তিক বাংলাদেশ—তা বাস্তবায়ন করতে। আমরা এখন সেই দ্বারপ্রান্তে।”

তিনি আরও বলেন, “খুব ইচ্ছে ছিল, তিনি অন্তত এই নির্বাচনটা দেখে যাবেন। হয়তো জান্নাতের ফেরদৌস থেকে তিনি তা দেখবেন। আশা করি আমরা সবাই মিলে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।”

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম, খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামা ইসলামের আব্দুর রব ইউসূফী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বিশিষ্ট কলামিস্ট মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান, সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং আম জনতা দলের তারেক রহমান।

এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে শোক বইয়ে সই করেছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

আগামীকাল বুধবার দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়াকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৭ নভেম্বর তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়লে কেবিন থেকে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নানা জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে ছিল লিভার ও কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস এবং বিভিন্ন সংক্রমণজনিত সমস্যা।

 

news