দলে দলে আমেরিকা ছেড়ে ইউরোপে যাচ্ছেন নাগরিকরা!

আমেরিকা থেকে মানুষ সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন ইউরোপে। সেখানকার বিভিন্ন দেশে গিয়ে তাঁরা নতুন জীবন শুরু করছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী আমেরিকাবাসীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার। পর্তুগালে এই সংখ্যাটি তিন গুণ বেড়ে ১০ হাজার হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে স্পেনে আমেরিকাবাসীর সংখ্যা ২০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ হাজার।

২০২২ সালে ডেনমার্কে ৪,৬৮৯ জন, সুইজারল্যান্ডে ৪,৫১৩ জন, আয়ারল্যান্ডে ৩,৮৩১ জন, চেক রিপাবলিকে ২,৫১৩ জন আমেরিকার নাগরিককে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ফ্রান্স, জার্মানির মতো দেশেও গত কয়েক বছরে আমেরিকার প্রবাসীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটেনে বসবাসকারী আমেরিকানদের সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার, ২০২১ সালে তা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার।

শুধুমাত্র গত বছরেই আমেরিকা থেকে চার হাজারের বেশি মানুষ ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছেন। সেখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেছেন।

আমেরিকার নাগরিকদের ইউরোপে চলে যাওয়ার নেপথ্যে উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। কোনও একটি বিশেষ কারণে আমেরিকানরা দেশ ছাড়ছেন না। বরং, মাতৃভূমি ত্যাগের কারণ বিবিধ।

অনেকের মতে, আমেরিকায় মানুষের জীবনযাত্রার মান আগের চেয়ে পড়ে গিয়েছে। স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারছেন না অনেকেই। উন্নত জীবনধারার খোঁজে তাই ইউরোপে যাচ্ছেন তাঁরা।

আমেরিকায় বাড়িভাড়া বা থাকার খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে জমির দামও। নাগরিকদের বেতন বা রোজগার সেই অনুপাতে বাড়েনি। ইউরোপের দেশগুলিতে এই খরচ অপেক্ষাকৃত কম।

অনেকেই দেশের রাজনৈতিক ডামাডোলে বিরক্ত। তবে এ ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

আমেরিকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন,  এমন প্রতিজ্ঞা করে বসেছিলেন নাগরিকদের অনেকেই। ২০১৬ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কেউ কেউ সত্যিই দেশ ছাড়েন।

বারাক ওবামার আমলে ১১ শতাংশ, ট্রাম্পের আমলে ১৬ শতাংশ আমেরিকান ইউরোপে চলে গেছেন। ২০২২ সালের মধ্যে এই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৭ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকায় চাকরিজীবীদের কাজের গড় সময় বছরে ১,৮১১ ঘণ্টা। ইউরোপে এক বছরে ১,৫৭১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।

আমেরিকা ছাড়ার নেপথ্যে অন্য একটি কারণ হল বর্ণবিদ্বেষ। আমেরিকান সমাজের বড় সমস্যা এটি। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের এখনও নিচু নজরে দেখে সমাজের একাংশ। ২০২১ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর অনেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ইউরোপে চলে গিয়েছিলেন।

তবে আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে করোনা অতিমারি-পরবর্তী কালে। আমেরিকায় থাকার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই।

অনেকেই তাই আমেরিকায় অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। ইউরোপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ইন্ধন জুগিয়েছে সরকারের এই অর্থনৈতিক জটিলতা।

ইউরোপের যে দু’টি দেশকে অনেক বেশি সংখ্যক আমেরিকাবাসী নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের জন্য বেছে নিয়েছেন, সেগুলি হল পর্তুগাল এবং স্পেন। এ ছাড়া, অন্য ইউরোপীয় দেশেও আমেরিকানদের ভিড় বাড়ছে।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news