ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে, যাকে তারা "অপারেশন সিন্দুর" নামে অভিহিত করেছে। তবে পাকিস্তান এই হামলাকে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের উপর আগ্রাসন হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আমরা এই সংবাদের বিস্তারিত জানাবো পাকিস্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে, যেখানে তারা এই হামলাকে অন্যায় এবং উস্কানিমূলক বলে অভিহিত করেছে।
ভারত দাবি করেছে যে তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তান এই হামলাকে বেসামরিক নাগরিকদের উপর অমানবিক আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেছে। এই হামলায় দুজন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছে বলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন ইসলামাবাদ থেকে আমাদের প্রতিনিধি, যিনি এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
ইসলামাবাদে এখন পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারত তিনটি শহর—মুজাফফরাবাদ, কোটলি এবং বাহাওয়ালপুরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলাগুলো সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক এলাকায় লক্ষ্য করে করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। পাকিস্তানের সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে তারা এই আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতিসংঘের কাছে এই ঘটনার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এই হামলার পটভূমি নিয়ে আলোচনা করা যাক। গত ২২ এপ্রিল ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের পাহালগামে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত দাবি করেছে যে এই হামলার সাথে পাকিস্তানের হাত রয়েছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান বলেছে, তারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য প্রস্তুত। তবে ভারত কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমাদের বিশ্লেষক এই বিষয়ে কী বলছেন, শুনবো।
এই হামলা ভারতের একটি উস্কানিমূলক পদক্ষেপ। পাকিস্তান বারবার বলেছে যে তারা কাশ্মীরে শান্তি চায় এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারতের এই হামলা শুধুমাত্র উত্তেজনা বাড়াবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত সংযম দেখিয়েছে, কিন্তু তারা জানিয়েছে যে তারা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা এবং ভারতকে এই ধরনের আগ্রাসন থেকে বিরত রাখা।
এই হামলার পর পাকিস্তানের জনগণের প্রতিক্রিয়া কেমন? আমাদের প্রতিনিধি মুজাফফরাবাদ থেকে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন।
মুজাফফরাবাদে এখন জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও ভয়ের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করা হয়েছে। এখানকার একটি বাজার এবং একটি আবাসিক এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জনগণ ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং পাকিস্তান সরকারের কাছে এর জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কয়েকটি দেশ উভয় পকশের প্রতি সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। তবে পাকিস্তান বলেছে, ভারতের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন এবং উভয় দেশকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই সংকটের পেছনে কাশ্মীর ইস্যুটি মূল ভূমিকা পালন করছে। ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করে। পাকিস্তান বরাবরই বলে আসছে যে কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে, ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে। এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এবং এই হামলা সেই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সরকার এই হামলার পর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন, যেখানে সামরিক ও বেসামরিক নেতারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই ঘটনা উত্থাপন করবে এবং ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।
এই মুহূর্তে পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পাকিস্তানের জনগণ এবং সরকার এই হামলাকে একটি অন্যায় আগ্রাসন হিসেবে দেখছে। আমরা আশা করছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসবে এবং উভয় দেশের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে।


