গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় শনিবার অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল গাজা সিটিতেই প্রাণ হারিয়েছে ৪৫ জন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ব্যাপক সমালোচিত স্থল আক্রমণ আরও তীব্র করার পর এ হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

‘নিরাপদ এলাকা’র ভেতরেই মৃত্যু

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তারা মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকাকে “নিরাপদ মানবিক অঞ্চল” বলে ঘোষণা করলেও, সেই একই স্থানে বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।

সরকারি হিসাব বলছে, ১১ আগস্ট গাজা সিটি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি শুরু হওয়ার পর থেকে কেবল মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ১৩৩টি হামলায় ১,৯০৩ জন নিহত হয়েছে। এটি পুরো সময়কালে গাজার মোট মৃত্যুর প্রায় ৪৬ শতাংশ

অফিসটি বলেছে, দক্ষিণে সরে যেতে বলা হলেও বেসামরিক নাগরিকদের সরাসরি টার্গেট করা হচ্ছে। তারা সতর্ক করেছে—আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা আসলে আরও গণহত্যার জন্য “সবুজ সংকেত” হিসেবে কাজ করছে।

সরাসরি হামলার শিকার পরিবারগুলো

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ শনিবার জানান, ভোর থেকে গাজা সিটিতে হামলা বেড়েছে। আল-শিফা হাসপাতালে একের পর এক আহত মানুষ আসছে।
তিনি বলেন, “অল্প কিছুক্ষণ আগে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এক পরিবার গাড়িতে করে স্থান পরিবর্তন করছিল, তখন ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই চারজন মারা যান।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ড্রোন আর যুদ্ধবিমান শত শত মানুষকে তাড়া করছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছুটে বেড়ালেও তারা নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে না।”

হাসপাতালে চরম সংকট

নিয়মিত হামলার কারণে গাজা সিটির অনেক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শহর দখল করে প্রতিদিন আরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে।

শনিবার সকালে ভারী বোমাবর্ষণের পর জর্ডান ফিল্ড হাসপাতালকে পুরোপুরি খালি করা হয়। ১০৭ জন রোগী এবং সব চিকিৎসক-কর্মীকে সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

অন্যান্য হাসপাতালও ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। মৌলিক ওষুধ যেমন অ্যানেস্থেশিয়া, অ্যান্টিবায়োটিক নেই। চিকিৎসকরা নিজেরাই ক্ষুধার্ত, অথচ তাদের ক্ষুধার্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

এক বিছানায় দুই রোগী

মধ্য গাজার যে হাসপাতালগুলো আংশিকভাবে চালু আছে, সেগুলোতে উত্তর দিক থেকে পালিয়ে আসা আহত ও অসুস্থ মানুষের ঢল নেমেছে। জরুরি চিকিৎসার চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন,
“দক্ষিণের হাসপাতালগুলোর অবস্থা এখন আরও ভয়াবহ। আগে যেখানে এক বিছানায় একজন রোগীকে ভর্তি করা হতো, এখন চিকিৎসকরা বাধ্য হচ্ছেন এক বিছানায় দুইজন রোগীকে রাখতে।”

news