যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি ইহুদি উপাসনালয় বা সিনাগগে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। হামলাকারী ছিলেন সিরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক জিহাদ আল-শামি (৩৫)।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে হিটন পার্ক হিব্রু কনগ্রেগেশন সিনাগগের বাইরে এ হামলা ঘটে। আল-শামি প্রথমে লোকজনের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেন, এরপর ছুরি নিয়ে আক্রমণ করেন। এতে দুই ইহুদি নিহত এবং তিনজন আহত হন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ (জিএমপি) জানিয়েছে, ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে— ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী দুই পুরুষ এবং ৬০ বছর বয়সী এক নারী। পুলিশের দাবি, তারা হামলার পরিকল্পনা ও প্ররোচনার সঙ্গে যুক্ত।
পুলিশ জানায়, আল-শামির শরীরে একটি সন্দেহজনক ডিভাইস ছিল, যা পরে পরীক্ষা করে অকার্যকর বিস্ফোরক প্রমাণিত হয়েছে। তবে এ হামলার বিষয়ে সরকারের চরমপন্থা-বিরোধী প্রকল্প ‘প্রিভেন্ট’-এ কোনো তথ্য যায়নি। জানা গেছে, আল-শামি ছোটবেলায় যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এবং ২০০৬ সালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান।
ইয়োম কিপুরের দিন হামলা
হামলাটি সংঘটিত হয় ইহুদিদের ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়োম কিপুরে’। এদিনকে ইহুদিরা প্রায়শ্চিত্তের দিন হিসেবে পালন করেন। ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “এটি ইহুদিদের ওপর টার্গেট করে করা হয়েছে।” তিনি দেশে ফিরেই ইহুদি উপাসনালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের ঘোষণা দেন। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও রাজধানীর সিনাগগগুলোয় নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানান।
ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের প্রধান র্যাবাই স্যার অ্যাফ্রেইম মারভিস বলেছেন, এই হামলা হলো সমাজজুড়ে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার ঢেউয়ের করুণ প্রতিফলন। তিনি যোগ করেন, “আমরা আশা করেছিলাম এমন দিন আর দেখব না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতাম এটি ঘটবেই।”
প্রার্থনা চলাকালীন হামলার সময় র্যাবাই ড্যানিয়েল ওয়াকার সিনাগগের দরজা বন্ধ করে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে ‘নায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন। পুলিশ প্রধান স্যার স্টিফেন ওয়াটসনও উপাসক ও নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশংসা করেছেন।
পুলিশের তাৎক্ষণিক অভিযান
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটে যখন হামলাকারী আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, তখন পুলিশ তাকে গুলি করে। অর্থাৎ, প্রাথমিক ফোন কলের মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই পুলিশ চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়।
পরে সন্ধ্যায় জিএমপি জানায়, ক্রাম্পসল ও প্রেস্টউইচের বেশ কয়েকটি জায়গা এখনো ক্রাইমসিন হিসেবে সিল করা আছে এবং তদন্ত চলমান।
এই ভয়াবহ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, আর সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


