গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী, আর এতেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ। চার শতাধিক অংশগ্রহণকারীকে আটক করার পর বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ইউরোপের নানা শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
স্পেনে বিক্ষোভকারীরা বার্সেলোনার দোকান ও রেস্তোরাঁর কাচ ভাঙচুর করেন এবং দেয়ালে লিখে দেন ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান। একইভাবে ইতালিতেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা মিলানের স্টাতালে এবং রোমের লা সাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক ক্যাম্পাস দখল করে নেন। বলোনিয়ায় গাড়ির টায়ার ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়। তুরিনের রাস্তায়ও শত শত মানুষ ভিড় জমিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এর পাশাপাশি রোমে এক ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ আয়োজন করেন চিকিৎসক, নার্স ও ফার্মাসিস্টরা। তাঁরা ফ্ল্যাশ মবের মাধ্যমে মোবাইলের আলো জ্বেলে গাজার নিহত ১,৬৭৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নাম একে একে পড়ে শোনান। এদিকে, ইতালির ট্রেড ইউনিয়নগুলো সুমুদ ফ্লোটিলার সমর্থনে সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে। এই ধর্মঘটকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে।
যদিও ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসব বিক্ষোভের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন সুমুদ ফ্লোটিলা অভিযানকে।
বিক্ষোভ সীমাবদ্ধ থাকেনি শুধু ইতালি-স্পেনেই। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন, ফ্রান্সের প্যারিস, জার্মানির বার্লিন ও সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হাজারো মানুষ সড়কে নেমে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন। লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্স, মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি, আর পাকিস্তানের করাচিতেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
অন্যদিকে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে জনতা জড়ো হয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে শ্লোগান দিতে থাকেন— “ইসরায়েল গাজাকে নয়, মানবতাকেই হত্যা করছে”, “চুপ থেকো না, বসে থেকো না, উঠে দাঁড়াও” ইত্যাদি।
এদিকে, বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সুমুদ ফ্লোটিলার ৪৪টি নৌযানের মধ্যে ৪৩টি আটক করেছে। প্রায় ৫০০ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে আছেন বিশ্বখ্যাত জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আডা কোলাউ, ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রিমা হাসান এবং পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সিনেটর মুস্তাক আহমদ খান।
ইসরায়েল জানিয়েছে, আটককৃতদের দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদের ইসরায়েলে রাখা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এ ঘটনায় যে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ তৈরি হয়েছে, তা এখন নতুন করে ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতকে ঘিরে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে তুলছে।


