পর্তুগালের পার্লামেন্ট সম্প্রতি নারীদের ধর্মীয় বা লিঙ্গগত কারণে মুখ ঢাকার পর্দা পরা নিষিদ্ধ করার একটি বিতর্কিত বিল অনুমোদন করেছে। পর্যবেক্ষক ও সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপটি মূলত মুসলিম নারীদের লক্ষ্য করে নেওয়া হয়েছে, যারা বোরকা বা নিকাব পরেন। এ খবর জানিয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'দ্য গার্ডিয়ান'।
কী আছে এই নতুন বিলে?
ডানপন্থী চেগা দল বিলটি প্রস্তাব করেছিল। এই বিল অনুযায়ী, নারীরা জনসমক্ষে বোরকা (যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীর ঢেকে রাখে) বা নিকাব (যা পুরো মুখ ঢেকে রাখে, কেবল চোখের চারপাশ খোলা থাকে) পরতে পারবেন না।
জরিমানা: বিলটি আইনে পরিণত হলে, জনসমক্ষে মুখ ঢেকে রাখলে ২০০ থেকে ৪,০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।
ব্যতিক্রম: তবে বিমানে, কূটনৈতিক স্থাপনা এবং উপাসনালয়ে এই ধরনের পোশাক পরার অনুমতি থাকবে।
প্রেসিডেন্ট সুসার হাতে বিলের ভাগ্য
এই বিলটি কার্যকর হতে হলে এখনো প্রেসিডেন্ট মারসেলো রেবেলো দে সুসা'র অনুমোদন প্রয়োজন। তিনি চাইলে এতে ভেটো দিতে পারেন, অথবা বিলটি সাংবিধানিক আদালতে পাঠাতে পারেন।
যদি এটি আইনে পরিণত হয়, তাহলে পর্তুগাল যোগ দেবে ইউরোপের সেই দেশগুলোর তালিকায়—যেমন ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডস। এসব দেশে আংশিক বা পূর্ণভাবে মুখ ঢাকার পোশাক ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও পর্তুগালে খুব অল্প সংখ্যক নারী বোরকা বা নিকাব পরেন, তবুও ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো এখানেও ইসলামি পর্দা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
'বিভেদ তৈরির রাজনৈতিক কৌশল': তীব্র সমালোচনা
চেগা দল যুক্তি দিয়েছে যে মুখ ঢেকে রাখা 'নারীদের সামাজিক বঞ্চনা ও অধীনতার প্রতীক' এবং এটি 'স্বাধীনতা, সাম্য ও মানব মর্যাদা'-র মতো নীতির পরিপন্থী। ডানপন্থী কিছু দল এই বিলকে সমর্থন করেছে।
তবে বামঘেঁষা দলগুলো এই বিলের তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। মধ্যপন্থি বাম সোশ্যালিস্ট পার্টির সংসদ সদস্য পেদ্রো দেলগাদো আলভেস বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিদেশিরা এবং ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীরা। তিনি স্বীকার করেন যে কোনো নারীকে জোর করে পর্দা পরানো ঠিক নয়, তবে ডানপন্থী দলের এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভুল। তিনি আরও বলেন, এটি মানবাধিকারের প্রশ্ন নয়, বরং এটি বিভেদ ও বৈষম্য তৈরির একটি রাজনৈতিক কৌশল।
