মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা একটি স্ক্যাম সেন্টারে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানের সময় সেন্টার থেকে শত শত মানুষ পালিয়ে যায়। এই স্ক্যাম সেন্টার চালাতে প্রতারকরা ব্যবহার করছিল ইলন মাস্কের স্টারলিংকের ইন্টারনেট রিসিভার ডিস।

এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারে স্টারলিংক এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়নি। থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মিয়াওয়াড্ডি এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এই স্ক্যাম সেন্টারের জন্য স্থাপনা তৈরি হচ্ছিল। এখানে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছিল স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ। সম্প্রতি এএফপি এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়াওয়াড্ডি এলাকা ‘রোমান্স স্ক্যাম’ এবং ‘পিগ বুচারিং’ নামে বিনিয়োগ প্রতারণার জন্য কুখ্যাত। ‘পিগ বুচারিং’ হলো অনলাইনে মিথ্যা সম্পর্ক গড়ে তুলে কাউকে লোভনীয় বিনিয়োগের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল। এই সিন্ডিকেট চালায় চীনের অপরাধীরা, যারা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে কাজ করে।

মিয়াওয়াড্ডির কেকে পার্কে স্ক্যাম সেন্টার

স্ক্যাম সেন্টারটি গড়ে উঠেছে মিয়াওয়াড্ডির কেকে পার্ক নামে একটি এলাকায়। এএফপির সাংবাদিকরা স্যাটেলাইট ছবি এবং ড্রোনের মাধ্যমে দেখেছেন, এখানকার অনেক স্থাপনার ছাদে স্টারলিংকের রিসিভার ডিস বসানো আছে। মাসব্যাপী তদন্তের পর এএফপি এই স্ক্যাম সেন্টারের অন্ধকার জগত এবং এর সঙ্গে জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রমাণ পেয়েছে। সেন্টারে কাজ করা কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে মানুষ পাচার থেকে শুরু করে দালালি—সব ধরনের অপরাধ হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে উদ্ধার হওয়া কয়েকজন কর্মী এএফপিকে বলেছেন, তাদের থাইল্যান্ডের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল। প্রতারণার কাজে বাধ্য করতে তাদের উপর মারধর ও নির্যাতনও করা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, ভালো বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে তাদের এখানে আনা হয়েছিল।

চীনের অভিনেতা ওয়াং জিংও এই স্ক্যাম সেন্টারে পাচারের শিকার হয়েছিলেন। উদ্ধারের পর তিনি জানান, থাইল্যান্ডে একটি ভুয়া অডিশনের প্রলোভনে তিনি মিয়ানমারে এই স্ক্যাম সেন্টারে আটকা পড়েন। এরপর বেইজিং মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষকে এই এলাকায় কঠোর অভিযান চালানোর জন্য চাপ দেয়।

অভিযান ও স্টারলিংকের পদক্ষেপ

এএফপির প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই মাসে মিয়ানমারের প্রশাসন একাধিক অভিযান চালায়। বুধবারের অভিযানের সময় সাংবাদিকরা দেখেছেন, শত শত কর্মী স্ক্যাম সেন্টার থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের স্ক্যাম সেন্টারে ব্যবহৃত ২,৫০০-এর বেশি ডিভাইসের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এক্স-এ একটি পোস্টে স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ব্যবসা) লরেন ড্রেয়ার বলেছেন, ‘স্পেসএক্স মিয়ানমারের সন্দেহভাজন স্ক্যাম সেন্টারের আশপাশে থাকা ২,৫০০-এর বেশি স্টারলিংক কিট শনাক্ত করে নিষ্ক্রিয় করেছে।’

স্পেসএক্স ইলন মাস্কের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান, যার অধীনে থাকা স্টারলিংক কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়।

 

news