থাইল্যান্ডের সাবেক রানি সিরিকিত শুক্রবার রাতে মারা গেছেন। তিনি ছিলেন বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মা এবং প্রয়াত রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের স্ত্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।

থাই রয়্যাল হাউসহোল্ড ব্যুরো একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, রানি সিরিকিত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২১ মিনিটে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে 'শান্তিপূর্ণভাবে' শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, তিনি ২০১৯ সাল থেকে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এবং হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

রানি সিরিকিতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজা ভাজিরালংকর্ন। তিনি রাজকীয় হাউসহোল্ড ব্যুরোকে পূর্ণ রাজকীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজপ্রাসাদ নিশ্চিত করেছে যে রানির মরদেহ ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসের দুসিত থ্রোন হলে শায়িত থাকবে।

রাজপরিবারের সদস্যরা আগামী এক বছর ধরে শোক পালন করবেন।

রানির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল তার মালয়েশিয়ায় আসন্ন আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।

রানি সিরিকিতের জন্ম হয়েছিল ১৯৩২ সালের ১২ আগস্ট। তখন তার বাবা ফ্রান্সে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্যারিসে পড়াশোনার সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ভবিষ্যৎ রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজের। ১৯৮০ সালে বিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্র 'সোল অব আ নেশন’-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি মজার ছলে বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রথম দেখা শুরু হয়েছিল ঘৃণা দিয়ে,’ কারণ রাজা প্রথম সাক্ষাতের দিন নাকি তিন ঘণ্টা দেরিতে এসেছিলেন!

রাজা ভূমিবলের অভিষেকের ঠিক এক সপ্তাহ আগে, ১৯৫০ সালের ২৮ এপ্রিল তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

ষাট-এর দশকে এই তরুণ রাজদম্পতি বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি আইজেনহাওয়ার, ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং মার্কিন সংগীতশিল্পী এলভিস প্রিসলির সঙ্গেও দেখা করেছিলেন।

ওই দশকেই রানি সিরিকিত আন্তর্জাতিকভাবে অন্যতম সেরা পোশাকরুচিসম্পন্ন নারী হিসেবে স্বীকৃতি পান।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নিয়ে বলেছিলেন, ‘থাইল্যান্ডের রাজা-রানিরা সবসময় জনগণের কাছাকাছি থাকেন। রাজাকে জাতির পিতা হিসেবে দেখা হয়, আর আমাদের মা হিসেবে। তাই আমাদের ব্যক্তিগত জীবন তেমন থাকে না।’

দেশের 'মা' হিসেবে পরিচিত রানি সিরিকিতের জন্মদিন ১২ আগস্টকে ১৯৭৬ সাল থেকে থাইল্যান্ডে মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

২০১২ সালে স্ট্রোক করার পর থেকে তাকে জনসমক্ষে খুব কমই দেখা গিয়েছিল। মৃত্যুকালে রানি সিরিকিত তার এক ছেলে ও তিন মেয়েকে রেখে গেছেন।

 

news