ইলন মাস্ক বহু বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার সম্পদের পরিমাণ আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে যখন এটি অর্ধ ট্রিলিয়ন বা ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে যায়। তবে এত সম্পদের মালিক হয়েও করেন সাধারণ জীবনযাপন।
২০২১ সালে মাস্ক জানান, টেক্সাসে তার বাসার দাম মাত্র পঞ্চাশ হাজার ডলার। তার সাবেক সঙ্গিনী ও দুই সন্তানের মা গ্রাইমস ২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাস্ক বিলিওনিয়ারদের মতো জীবনযাপন করেন না। তিনি মাঝে মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচেও থাকেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এক সময় ম্যাট্রেসের একপাশে গর্ত হয়ে যাওয়ার পরও মাস্ক নতুন ম্যাট্রেস কিনতে রাজি হননি।
জীবনযাপনে সাধারণ হলেও গাড়ির প্রতি মাস্কের ভালোবাসা অসীম। তার গাড়ির সংগ্রহে রয়েছে নানা বিস্ময়কর যান। এর মধ্যে রয়েছে ফোর্ড মডেল টি, ১৯৬৭ সালের জাগুয়ার ই-টাইপ রোডস্টার, ১৯৯৭ সালের ম্যাকল্যারেন এফ-ওয়ান এবং টেসলার প্রথম মডেল রোডস্টার, যেটি তিনি ২০১৮ সালে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিলেন। সবচেয়ে চমকপ্রদ গাড়িটি হলো ১৯৭৬ সালের লোটাস এসপ্রিট, যা জেমস বন্ড চলচ্চিত্রে সাবমেরিনে রূপ নিতে পারত। মাস্ক ২০১৩ সালে এটি কিনে এটিকে আবারও সাবমেরিনে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেছিলেন।
ব্যক্তিগত বিমানের ক্ষেত্রেও তার ব্যয় যথেষ্ট। তার কয়েকটি গালফস্ট্রিম জেট রয়েছে, যার প্রতিটির দাম কয়েক কোটি ডলার। তিনি বলেন, আমি যদি বিমান ব্যবহার না করি, তাহলে আমার কাজের সময় কমে যায়।
এক সময় মাস্কের উল্লেখযোগ্য রিয়েল এস্টেট সম্পদ ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার বেল-এয়ার এলাকায় তার সাতটি বাড়ির মূল্য ছিল ১০০ মিলিয়ন ডলার। এসব বাড়িতে ছিল সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ও বলরুম। এর মধ্যে একটি র্যাঞ্চ হাউস ছিল বিখ্যাত অভিনেতা জিন ওয়াইল্ডারের।
কিন্তু ২০২০ সালে মাস্ক ঘোষণা দেন যে তিনি সব স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করবেন এবং কোনো বাড়ির মালিকানা রাখবেন না। তিনি লিখেন, নগদ অর্থের প্রয়োজন নেই। আমি নিজেকে মানবতা ও পৃথিবীর জন্য উৎসর্গ করেছি। সম্পত্তি আপনাকে ভারাক্রান্ত করে। তবে তিনি শর্ত দেন যে জিন ওয়াইল্ডারের বাড়িটি ধ্বংস করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত তিনি ওয়াইল্ডারের ভাতিজাকে ওই বাড়িটি বিক্রি করেন এবং তাকে ঋণও দেন।
বর্তমানে মাস্কের নিজের কোনো বাড়ি নেই। তিনি বলেন, আমি বন্ধুদের বাড়িতে থাকি। বে এরিয়ায় গেলে বন্ধুদের অতিরিক্ত শোবার ঘরে থাকি। এই অভ্যাস তার নতুন নয়। ২০১৫ সালে গুগলের সিইও ল্যারি পেজ বলেছিলেন, মাস্ক কখনও কখনও ই-মেইল করে জিজ্ঞেস করতেন, আজ রাতে কোথায় থাকবো জানি না। তোমার বাড়িতে আসতে পারি?
সম্প্রতি মাস্কের জন্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পারিশ্রমিক প্যাকেট শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন পেয়েছে। এই প্যাকেট পাওয়ার শর্ত হলো, তাকে আগামী ১০ বছরে টেসলার বাজারমূল্য ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। লক্ষ্য পূরণ হলে তাকে ৪০০ মিলিয়নের বেশি অতিরিক্ত শেয়ার দেওয়া হবে, যার মূল্য দাঁড়াতে পারে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।
মাস্ক বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় বিলিয়ন ডলার দান করেছেন এবং মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তার দান-খয়রাত নিয়ে সমালোচনাও আছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে তার দানকে ‘অগোছালো ও মূলত স্বার্থপর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাকে কর ছাড় পেতে এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে কাজে লাগাতে সাহায্য করে।
মাস্ক ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, তারা ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও সাহসী প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানব অগ্রগতিতে কাজ করছে।’ তবে নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, তিন বছর ধরে সংস্থাটি তাদের দান করার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি এবং অনেক অনুদানই গেছে মাস্কের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানে।
মাস্ক নিজে ঐতিহ্যবাহী দান নিয়ে সন্দিহান। তার মতে, তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই আসল দান। তিনি বলেন, টেসলা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটাচ্ছে, স্পেসএক্স মানবজাতির দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকা নিশ্চিত করছে এবং নিউরালিঙ্ক মস্তিষ্কের আঘাত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি মোকাবিলা করছে।
