ভেনেজুয়েলার আকাশপথে বিপদের ছায়া পড়তেই আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলো ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। মার্কিন বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এফএএ) সতর্ক করে বলেছে, এখানে নিরাপত্তার অবস্থা খারাপ হচ্ছে আর সামরিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এর ফলে বেশ কয়েকটা বড় এয়ারলাইন দেশটিতে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে – যাত্রীরা এখন চিন্তায় পড়ে গেছেন!

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার২৪ আর সিমন বলিভার মাইকেটিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, শনিবার ব্রাজিলের গোল, কলম্বিয়ার অ্যাভিয়াঙ্কা, চিলির লাতাম, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ক্যারিবিয়ান এয়ারলাইনস এবং পর্তুগালের ট্যাপ এয়ার কারাকাস থেকে ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে। এর ফলে হাজারো যাত্রী আটকে পড়েছেন, বাড়ি ফেরার প্ল্যান সব উলটে গেছে।

ট্যাপ এয়ার পর্তুগাল শনিবার আর আগামী মঙ্গলবারের ফ্লাইট বাতিলের কথা নিশ্চিত করে বলেছে, মার্কিন সতর্কবার্তায় স্পষ্ট যে ভেনেজুয়েলার আকাশপথে নিরাপত্তা আর নিশ্চিত নয়। কলম্বিয়ার বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা অ্যারোনটিকা সিভিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মাইকেটিয়া এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে আর সামরিক কার্যক্রম বাড়ছে, যা ফ্লাইট চালানোর জন্য 'সম্ভাব্য ঝুঁকি' তৈরি করেছে।
স্পেনের ইবেরিয়াও সোমবার থেকে কারাকাসগামী ফ্লাইট স্থগিত করেছে। তারা বলেছে, পরিস্থিতি দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে শনিবার কারাকাস থেকে মাদ্রিদ যাওয়ার ফ্লাইটটা স্বাভাবিকভাবে ছেড়েছে। অন্যদিকে, কোপা এয়ারলাইনস আর উইঙ্গো শনিবার তাদের ফ্লাইট চালিয়েছে।

এফএএ তাদের সতর্কবার্তায় বলেছে, ভেনেজুয়েলা আর আশপাশের অঞ্চলে 'নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে এবং সামরিক তৎপরতা বেড়েছে', যা যেকোনো উচ্চতায় উড়োজাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অঞ্চলে ব্যাপক মার্কিন সামরিক উপস্থিতি দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি, অন্তত আরও আটটি যুদ্ধজাহাজ এবং এফ-৩৫ বিমান।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন কারাকাসের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বর বাড়ানোর পাশাপাশি তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে, যার মধ্যে মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

ক্যারিবীয় সাগর এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে জাহাজের ওপর চলমান আক্রমণে মার্কিন বাহিনী জড়িত। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ২০টি নৌযানে আক্রমণ করেছে, যার মধ্যে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় মাদক পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিন্তু মার্কিন সামরিক বাহিনী এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে, এসব জাহাজ এবং তাদের যাত্রীরা অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত ছিল বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো হুমকি ছিল। ফলে আইন বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রকাশ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ এনেছেন।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা দিয়ে উড়ে যাওয়ার আগে মার্কিন বিমান সংস্থাগুলোকে এখন থেকে এফএএ-কে ৭২ ঘণ্টা আগে নোটিশ দিতে হবে।

news