জাপান যদি তাইওয়ান দ্বীপের কাছে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে, তাহলে তার মোকাবিলা করতে চীন পুরোপুরি সক্ষম এবং সংকল্পবদ্ধ। জাপানের এমন ইঙ্গিতের পরেই বেইজিং থেকে এলো এই কঠোর সতর্কবার্তা。
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'জাতীয় ভূখণ্ড এবং আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার দৃঢ় সংকল্প এবং সামর্থ্য চীনের রয়েছে।'

তাইওয়ান থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে ইয়োনাগুনি দ্বীপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সম্ভাব্যতা নিয়ে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্তব্যের প্রেক্ষাপটেই চীনের এই তীব্র প্রতিক্রিয়া।

মাও নিং জাপানকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ১৯৪৫ সালের পটসডাম ঘোষণা অনুযায়ী, টোকিওর উচিত শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক কৌশল অনুসরণ করা। তাদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর কোনো অধিকার নেই। তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "গত কয়েক বছরে জাপান তার নিরাপত্তা নীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন এনেছে। তারা ধীরে ধীরে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়িয়েছে, অস্ত্র রপ্তানির নিয়ম শিথিল করেছে, আক্রমণাত্মক অস্ত্র তৈরিতে মন দিয়েছে এবং এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র না বানানোর তিনটি মূলনীতি থেকেও সরে আসার পরিকল্পনা করছে।"

তার মতে, "টোকিওর কিছু রাজনৈতিক শক্তি এখন সামরিকীকরণের পথে হাঁটছে। এই সিদ্ধান্ত জাপান এবং পুরো অঞ্চলকেই এক ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে।"

চীনের এই কূটনীতিক আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের দিকে নজর দিতে বলেন। তিনি বলেন, এই বছরটি জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের গণ প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী, পাশাপাশি তাইওয়ানকে জাপানি দখল থেকে মুক্তিরও ৮০ বছর পূর্ণ হয়েছে।

মাও নিং জোর দিয়ে বলেন, চীন কখনই জাপানের অতি-ডানপন্থী শক্তিগুলোকে 'ইতিহাসের চাকা পেছানোর' সুযোগ দেবে না। তাইওয়ান ইস্যুতে কিংবা জাপানে সামরিকবাদের পুনরুত্থানে কোনো ধরনের বহিরাগত হস্তক্ষেপই তারা মেনে নেবে না।

তাইওয়ান নিয়ে বেইজিং আর টোকিওর দ্বন্দ্ব

এই ঘটনার আগে, জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাইওয়ান থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরের ইয়োনাগুনি দ্বীপে তাদের আত্মরক্ষা বাহিনীর জন্য মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা থেকে তারা সরে আসেনি।

এছাড়াও, জাপানের নতুন ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচিও সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তার কথায়, "তাইওয়ানের আশেপাশে কোনো সামরিক সংকট তৈরি হলে, সেটা জাপানের জন্য একটি 'অস্তিত্বের হুমকি' হয়ে দাঁড়াবে।" এমন পরিস্থিতিতে টোকিওর 'সম্মিলিত আত্মরক্ষার অধিকার' ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়ারও ইঙ্গিত দেন তিনি।

জাপানের এই ধরনের মন্তব্য বেইজিংয়ে তীব্র রাগের সৃষ্টি করেছে এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সাল থেকে তাইওয়ান স্বশাসিতভাবে শাসিত হয়ে আসছে। চীনের গৃহযুদ্ধে পরাজয়ের পর চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে কুওমিনতাং বাহিনীর বাকি অংশ সেখানে পালিয়ে যায়। তখন থেকেই দ্বীপটি নিজেদের পুরনো পতাকা ও কিছু প্রতীক বহন করে চলেছে। তবে বেইজিং তাইওয়ানকে চীনের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবেই দেখে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশই চীনের এই অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।

news