কানাডার নাগরিকত্ব আইনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। নতুন আইন বিল সি–৩ কার্যকর হলে বিদেশে জন্ম নেওয়া হাজারো কানাডীয় বংশোদ্ভূত পরিবার বহু বছরের জটিলতা থেকে মুক্তি পাবে। এই সংস্কারকে কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকত্ব পরিবর্তন বলেই দেখা হচ্ছে।

অভিবাসন মন্ত্রী লেনা মেটলেজ ডিয়াব বলেন, “বিল সি–৩ আমাদের নাগরিকত্ব আইনের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো সমাধান করবে। বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া শিশুদের পরিবারগুলোর জন্য এটি ন্যায়বিচার বয়ে আনবে। পুরোনো আইনে বাদ পড়া মানুষরা নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন, আর ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হবে আধুনিক নিয়ম।”

আইআরসিসি ব্যাখ্যা করে জানায়, ২০০৯ সালে চালু হওয়া এই সীমাবদ্ধতা বিশাল সমস্যা তৈরি করেছিল। নিয়মটি ছিল—
যদি কোনো কানাডীয় অভিভাবক নিজেই বিদেশে জন্ম নিয়ে থাকেন বা দত্তক নেওয়া হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া সন্তান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না।

শুধু তখনই নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়, যখন বাবা-মায়ের একজন কানাডায় জন্মগ্রহণ করেছেন বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন।

এই জটিলতার কারণে অসংখ্য কানাডীয় ভূয়া ধারণায় ছিলেন যে তারা নাগরিক— কিন্তু বাস্তবে ছিলেন না। তাদেরই বলা হতো ‘হারানো কানাডিয়ান’।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অন্টারিও সুপিরিয়র কোর্ট এই নিয়মকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, এবং সরকারও এতে আপত্তি না জানিয়ে সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।

পুরোনো আইনের কারণে যাদের নাগরিকত্ব ছিল বিতর্কিত, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরায় নাগরিকত্ব পাবেন।

এখন থেকে বিদেশে জন্ম নেওয়া বা দত্তক নেওয়া শিশু নাগরিকত্ব পাবে, যদি তার কানাডীয় বংশোদ্ভূত অভিভাবক প্রমাণ করতে পারেন—
 তিনি সন্তানের জন্ম বা দত্তক নেওয়ার আগে কানাডায় অন্তত ১,০৯৫ দিন (তিন বছর) বসবাস করেছেন।

এই মানদণ্ড যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি।

আদালত এই আইন বাস্তবায়নের জন্য আইআরসিসিকে ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ফলে সব প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে সাজানোর সুযোগ পাচ্ছে সরকার।

১৯৪৬ সালের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব আইনের কারণে অসংখ্য মানুষ নাগরিকত্ব হারান বা বঞ্চিত হন। ২০০৯ ও ২০১৫ সালের সংস্কারে অনেক সমস্যা সমাধান হলেও প্রথম-জেনারেশন লিমিট বিদেশে জন্ম নেওয়া কানাডীয় পরিবারের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে ছিল।

নতুন বিল সি–৩ সেই দীর্ঘদিনের সংকটের অবসান ঘটাবে— এমনটাই আশা করছে বিশেষজ্ঞরা। কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এই আইন কার্যকর হলে নাগরিকত্ব আবেদন দ্রুত বাড়বে।

news