ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রাগে বিক্ষোভ: ইউরোপীয় প্রতিবাদের প্রতীক

 

ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলির অব্যাহত সমর্থন এবং ইউরোপীয় নাগরিকদের জীবনে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাবের কারণে ইউরোপীয় বহু দেশে সামাজিক বিক্ষোভ তীব্রতরো হয়েছে।

প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে সেখানকার অন্তত ৭০ হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসে। তারা "চেক ইজ ফার্স্ট প্রায়োরিটি" বলে স্লোগান দেয় এবং ইউক্রেনের প্রতি তাদের সরকারের নীতির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয়।

প্রাগের বিক্ষোভ কমিটি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে চেক প্রজাতন্ত্রের উচিত সামরিক বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা। সেইসঙ্গে রাশিয়াসহ অন্যান্য যেসব দেশ থেকে সরাসরি গ্যাস আমদানির চুক্তি আছে তাদের আস্থা অর্জন করে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজক জেরি হাভেল বলেন: বিক্ষোভের উদ্দেশ্য হলো পরিবর্তনের আহ্বান জানানো। জ্বালানির দাম বিশেষ করে গ্যাস এবং বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিজনিত সমস্যার সমাধান করা জরুরি। তা না হলে আসছে শরতে আমাদের অর্থনীতিতে ধস নামবে। সুতরাং আমাদের নীতিগত কৌশলে পরিবর্তন আনা জরুরি।

রাশিয়ার যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব দেশ সমর্থন দিয়েছে তাদের কারণে ই.ইউ'র অধিকাংশ সদস্য দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন নীতির সমর্থনে এইসব দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যোগ দেয়। সেইসাথে ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র সরবরাহ করে। এখন এই দেশগুলো ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতিসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে। চেক প্রজাতন্ত্রে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ১৭.২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যও আকাশচুম্বি। চেক প্রজাতন্ত্র এবং জার্মানিসহ ইউরোপের আরও অনেক দেশেই জ্বালানি সংকটের কারণে তাদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মক সমস্যায় পড়ে গেছে। জার্মানির বাণিজ্য ঘাটতি এখন নজিরবিহীন। এই সংকট যে কেবল জার্মানি কিংবা ইউরোপেই সীমাবদ্ধ তা নয় বরং অর্থনৈতিক এই সংকট এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।

জার্মানিতে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সরকারি কর্মকর্তারা তাই সম্ভাব্য সামাজিক প্রতিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যে-কোনো মুহূর্তে বিক্ষুব্ধ জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে পারে বলে তারা শঙ্কিত।

ইউরোপে শীত ঋতু ঘনিয়ে আসছে। গ্যাসের মজুদ কী করে হবে তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ইউরোপের কর্মকর্তারা। এরইমাঝে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: তাঁর দেশ জ্বালানি খাতে যুদ্ধ অর্থনীতির মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে। কারণ সুইডেনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম এখন অভূতপূর্ব পর্যায়ে বেড়েছে।

সুতরাং বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা ইউক্রেনের প্রতি সামরিক সহায়তার নীতিতে অটল থাকলে ইউরোপীয়দের মধ্যে বিভাজন তৈরির ঝুঁকি আরও তীব্র হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতেও এই ইউনিয়নের অবস্থান আগের তুলনায় দুর্বলতরো হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news