আইরিশদের উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৮৩ রানে জিতে সবচেয়ে বেশি রানে জয়ের কীর্তি গড়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে দলীয় রেকর্ড রান (৩৪৯) রান করলেও বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যাক্ত হয়। প্রথম দুই ম্যাচে রেকর্ড গড়া বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জিতেছে ১০ উইকেটে। এর আগে ৯ উইকেটে জয়ের রেকর্ড রয়েছে ৫ বার। একবার করে কেনিয়া-জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সর্বোচ্চ দুবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। ১০২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তামিম-লিটনের ব্যাটে ১৩.১ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। লিটন ৫০ ও তামিম ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছে স্বাগতিক দল।
পয়েন্টে চারের মারের পর আবার হামপ্রেজকে সুইপ করে ডিপ স্কয়ার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেন লিটন। লিটন মাত্র ৩৭ বলে পেয়ে যান চলতি সিরিজের দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি। ১০টি চারে লিটনের ইনিংসটি সাজানো ছিল।
আইরিশদের বিপক্ষে বড় জয়ের পথে বাংলাদেশ। ১০২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮১ রান তোলে। লিটন ৩৬ ও তামিম ৩৫ রানে ব্যাটিং করছেন।
ইনিংসের দ্বিতীয় দুই চার মেরে বাউন্ডারির সূচনা করেন লিটন দাস। পরের ওভার থেকে শুরু হয় তামিমের মার। অ্যাডায়ারকে ৩ চার হাঁকান তৃতীয় ওভারে। ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে দারুণ। ৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৯ রান। তামিম ১৮ বলে ২৬ ও লিটন ১২ বলে ৯ রানে ব্যাট করছেন।
হাসানের ফাইফারে ১০১ রানে অলআউট আয়ারল্যান্ড
হাসানের করা ২৯তম ওভারের প্রথম বল গ্রাহাম হুমের প্যাডে লাগে। জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। বল ব্যাট স্পর্শ না করায় এবং উইকেটে হিট করায় আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়। ৩ রানে ফেরেন হুম। আয়ারল্যান্ড ১০১ রানে অলরাউট হয়। হাসান ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফাইফার নেন। ৯.১ ওভারে মাত্র ৩২ রান দিয়ে তার শিকার ৫ উইকেট। এ ছাড়া তাসকিন ৩টি ও এবাদত নেন ২ উইকেট। এই প্রথম বাংলাদেশের পেসাররা সবকতি উইকেট নিয়েছেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮টি নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন ক্যাম্পার। ২৮ রান আসে টকারের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরের মুখ দেখেননি। তিনজন ফেরেন শুন্য রানে।
হাসানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন ক্যাম্পার। টাইমিং ঠিক মতো হয়নি। ফাইনলেগে বল তালুবন্দি করেন তাসকিন। একাই লড়াই চালিয়ে যাওয়া ক্যাম্পারকে অবশেষে থামতে হলো ৩৬ রানে। ৪টি চারে ৪৮ বলে এই রান করেন ক্যাম্পার। ৯৬ রানে নবম উইকেট হারালো আয়ারল্যান্ড। হাসান ৮ ওভারে ৩২ রান দিয়ে এখন পর্যন্ত চার উইকেট নিয়েছেন। এটি তার ক্যারিয়ার সেরা। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নেওয়া ২৮ রানে ৩ উইকেট ছিল ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
তাসকিনের করা ২২ তম ওভারের প্রথম বল। পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ম্যাকব্রিন। ৭ বলে ১ রান করেন তিনি। এক বল ডট দিয়ে তাসকিনের আবার আক্রমণ। ১৩৯ কিলোমিটার গতিবেগে যাওয় ব্যাক অব লেন্থ ডেলিভারি অ্যাডায়ারের ব্যাট ছুয়ে যায় উইকেটে। ২ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি তিনি। ৭৯ রানে ৮ উইকেট হারালো আয়ারল্যান্ড। ক্রিজে ক্যাম্পার-হুম।
১৯তম ওভারের পঞ্চম বল। এবাদতকে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডভ্লিউর শিকার হন টকার। জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ নেন টকার। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যাটিং ধসের পর ক্যাম্পারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েছিলেন টকার। ৪২ রানের জুটি ভেঙে স্বস্তি এনে দেন এই পেসার। ৩১ বলে ২৮ রান করেন টকার। সুইং করা পরের বলেই ক্রিজে আসা ডকরেল বোল্ড। বুঝতেই পারেননি গতির কারণে। ফেরেন শূন্য রানে। আগের দিন এবাদতকে সিলেট রকেট হিসেবে উপাধি দিয়েধিলেন গুরু অ্যালান ডোনাল্ড। আজ যেন সেটিরই প্রমাণ দিচ্ছেন। ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারালো আইরিশরা।
হাসানের জড়া আক্রমণের পরের ওভারে তাসকিন যোগ দিলেন। তাসকিনের শর্ট বলে ব্যাক ফুটে গিয়ে কাভারে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বালবির্নি। ভাগ্য সহায় হয়নি, বল ব্যাটে লেগে যায় স্লিপে শান্তর হাতে। ১৮ বলে ৬ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটসম্যান লরকান টকার-কার্টিস ক্যাম্পার। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৭ রান নিতে পেরেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশ নেয় ৪ উইকেট।
হাসান মাহমুদের করা নবম ওভারের প্রথম বল। ব্যাক অব লেন্থের ভেতরে ডোকা বল খেলতেই পারেননি স্টার্লিং। পায়ে লাগলে জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। ১২ বলে ৭ রান করেন স্টার্লিং। ক্রিজে এসে দুই বল খেলে এবার এলবিডব্লিউ হন হ্যারি টেক্টর। বল পায়ে লেগেছে নাকি ব্যাটে এটি নিশ্চিত হতে পারছিলেন তা অধিনায়ক তামিম ইকবাল। স্লিপে থাকা শান্ত অভয় দিলেন বারবার, 'বল পায়ে লাগছে ভাই।' শান্তর কথায় আস্থা রেখে তামিম রিভিউ নেন, এবং দেখা যায় বল ব্যাটের আগে প্যাড স্পর্শ করে। সরাসরি মিডল স্ট্যাম্পে আঘাত করায় আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার। শূন্য রানে ফিরলেন টেক্টর। ২২ রানে ৩ উইকেট হারায় আইরিশরা।
প্রথম ওভারে ৩ রান দিয়ে শুরু। দ্বিতীয় ওভার মেডেন। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে চার হজম করেন স্টিফেন ডোহনির কাছে। এক বল ডট দিয়ে হাসান মাহমুদ যেন প্রতিশোধ নিলেন। আউটসাইড অফের লেন্থ বল খোঁচা দিয়ে বসেন ডোহনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি মুশফিক। ১ চারে ২১ বলে ৮ রান করেন এই ওপেনার। ক্রিজে স্টার্লিংয়ের সঙ্গী বালবির্নি।
নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা পর হওয়া টসে হেরেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে। বাংলাদেশ ফিল্ডিং করবে। একাদশে এক পরিবর্তন এসেছে। ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বির পরিবর্তে খেলবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ২.৩০ মিনিটে খেলা শুরু হবে।
একাদশে যারা, তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন চৌধুরী ও নাসুম আহমেদ।
সিরিজ শুরুর আগের দিন ফুটবল খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন মেহেদি হাসান মিরাজ। দুই ম্যাচ পর ফেরেন তিনি। জায়গা হারানো ইয়াসির আলী দুই ম্যাচে করেন ১৭ ও ৭ রান। দুটি ম্যাচেই নেমেছেন ইনিংসের শেষে, প্রথম ম্যাচে ১০ বলে এই রান করেন তিনি।
অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নেমেছে আয়ারল্যান্ড। একাদশে যারা, অ্যান্ড্রু বালবার্নি (অধিনায়ক), মার্ক অ্যাডায়ার, কার্টিস ক্যাম্পার, ম্যাথু হামফ্রেজ, জর্জ ডকরেল, স্টিভেন ডোহেনি, গ্রাহাম হুম, অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইন, পল স্টার্লিং, হ্যারি টেক্টর ও লর্কান টাকার।

