অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে এক বড় আঘাতের খবর। দলের পাওয়ারহিটার এবং ফিনিশার টিম ডেভিড বিগ ব্যাশ লিগে (বিবিএল) হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ায় এখন ২০২৬ সালের আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য রীতিমত সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এই ইনজুরি তাদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) পার্থ স্কর্চার্সের বিপক্ষে হোবার্ট হারিকেন্সের ম্যাচে। অপটাস স্টেডিয়ামে দৌড়ে একটি রান নেওয়ার সময় তিনি হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ার ব্যথা অনুভব করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তার মুখে কষ্টের ছাপ ফুটে ওঠে এবং তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। মাঠ ছাড়ার আগে মাত্র ২৮ বলে দ্রুত ৪২ রান করেছিলেন তিনি।
এই ইনজুরিটি এসেছে সবচেয়ে খারাপ সময়ে। ২৯ বছর বয়সী এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের এটা এ বছরের দ্বিতীয় হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি; এর আগে একই ধরনের সমস্যায় তিনি আইপিএল মিস করেছিলেন। চ্যানেল সেভেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টিম ডেভিড বলেছেন, "দুই রান নেওয়ার জন্য ফিরে আসার সময় একটু কিছু টান টান অনুভব করলাম। এটা আদর্শ অবস্থা নয়, কিন্তু আমি এটাকে আরও খারাপ করতে চাইনি এবং বাকি খেলোয়াড়রা ম্যাচ জিতবে এ ব্যাপারে পুরো বিশ্বাস ছিল। এখন দেখি কী হয়।"
বিবিএল ও বিশ্বকাপ দুটিই ঝুঁকিতে:
এই বিগ ব্যাশ লিগ মৌসুমটি আগের চেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং এটি ২৫ জানুয়ারি শেষ হবে। ফলে হোবার্ট হারিকেন্সের হয়ে খেলার জন্য ডেভিডের সুস্থ হয়ে ওঠার সময় খুবই কম।
কিন্তু সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো ভারত ও শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বক Cup ২০২৬, যা শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। মাত্র ৪০ দিনের মতো সময় হাতে থাকায় অস্ট্রেলিয়া দল ও অধিনায়ক মিচেল মার্শ ডেভিডের ফিটনেস নিয়ে গভীর চিন্তায় রয়েছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক ফিনিশারদের একজন। তাকে না পাওয়াটা দলের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার জন্য বড় একটি ঘাটতি হবে। তিনি কতটা গুরুতরভাবে আঘাত পেয়েছেন এবং সুস্থ হতে কতদিন লাগবে, তা জানতে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) স্ক্যান করানো হবে।
দলের সহধর্মীদের প্রতিক্রিয়া:
এই ইনজুরিতে হারিকেন্স ক্যাম্পেও চাপের সৃষ্টি হয়েছে। দলের অধিনায়ক নাথান এলিস তার প্রধান ম্যাচ উইনারকে এভাবে মাঠ ছাড়তে দেখে খুবই বিচলিত। তিনি এখনও আশা করছেন টিম ডেভিড দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন, যদিও সবকিছুই এখন স্ক্যান রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাথান এলিস বলেছেন, "আমি মিথ্যা বলব না যদি বলি আমাদের মধ্যে কয়েকজনের এক চোখ বিশ্বকাপের দিকেও রয়েছে। তাই প্রথমে একজন বন্ধু হিসেবে, আমি ভেঙে পড়েছি যে সে সম্ভবত হারিকেন্সের জন্য কয়েকটি গেম মিস করতে পারে।" তিনি স্বীকার করেছেন যে টিমের বিবিএল ও বিশ্বকাপ উভয় আশাই এখন দ্রুত সেরে ওঠার উপর নির্ভর করছে।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য টিম ডেভিড কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
টিম ডেভিড আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের একজন। তার ফিটনেস অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে কতদূর যেতে পারবে, সেটি নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তিনি অত্যন্ত ধারাবাহিক, ৬৮ ম্যাচে ৩৬.২৭ গড়ে ১৫৯৬ রান করেছেন অকল্পনীয় ১৬৮.৮৮ স্ট্রাইক রেটে।
এই বছর ব্যাটিং অর্ডারে চার বা পাঁচ নম্বরে তোলা তাকে পুরোপুরি কাজে লেগেছে। এই পরিবর্তন তাকে তার প্রথম টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করতেও সাহায্য করেছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেতে সহায়তা করেছে, যা দেখায় এই মেগা ইভেন্টে অস্ট্রেলিয়ার জন্য তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
