দীর্ঘ খরা কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অবশেষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল ইংল্যান্ড। অ্যাশেজ ২০২৫-২৬ সিরিজের চতুর্থ টেস্টে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (MCG) হ্যারি ব্রুকের মারা জয়সূচক বাউন্ডারিতে শেষ হলো ৫৪৬৮ দিনের অপেক্ষা। এর আগে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড।

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর চার উইকেটে জয় নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। চলতি সিরিজে এটি দ্বিতীয়বার, যখন ম্যাচ দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হলো। ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড মাত্র ৩২ ওভারের একটু বেশি সময়েই কাজ সেরে ফেলে। কঠিন ব্যাটিং পরিস্থিতিতে জ্যাকব বেথেলের ৪৬ বলে করা গুরুত্বপূর্ণ ৪০ রান বড় ভূমিকা রাখে।

জানুয়ারি ২০১১-এর পর অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্ট জয়

২০১১ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট জয়ের আনন্দ পেল ইংল্যান্ড। এমসিজিতে উপস্থিত ইংলিশ সমর্থকদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায়। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় টানা ১৮টি টেস্টে জয়হীন ছিল ইংল্যান্ড, তাই এই সাফল্যের গুরুত্ব আরও বেশি।

এই ম্যাচটি ব্যক্তিগতভাবেও স্মরণীয় হয়ে থাকল জো রুটের জন্য। ১৭ বার চেষ্টা করার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় নিজের প্রথম টেস্ট জয় পেলেন। অধিনায়ক বেন স্টোকসও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৩তম টেস্টে এসে প্রথমবার জয়ের স্বাদ নিলেন।

তবে এই জয়ের পরও অ্যাশেজ সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ আগেই তাদের ঝুলিতে গেলেও, এই জয়ের মাধ্যমে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারল ইংল্যান্ড। উল্লেখযোগ্যভাবে, ম্যাচে দুই দলের কেউই হাফ-সেঞ্চুরি করতে পারেননি—অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ক্রিকেটে যা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৩২ সালে।

ইংল্যান্ড শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে লক্ষ্য তাড়া করে। ওপেনার বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি প্রথম ছয় ওভারেই ৪৫ রান যোগ করেন। তবে মিচেল স্টার্কের ধারালো ইয়র্কারে ৩৪ রানে বোল্ড হন ডাকেট।

এরপর তিন নম্বরে ব্রাইডন কার্সকে পাঠিয়ে চমক দেয় ইংল্যান্ড, কিন্তু সেটি কাজে আসেনি। ঝাই রিচার্ডসনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি, যা ছিল চার বছর পর রিচার্ডসনের প্রথম টেস্ট উইকেট।

চা-বিরতির পর বেথেল ও ক্রলি আবার গতি বাড়ান। তবে স্কট বোল্যান্ড দুজনকেই পরপর ফিরিয়ে দেন। পরে জো রুট ও বেন স্টোকস আউট হলেও, হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথ শান্ত মাথায় ম্যাচ শেষ করেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া

এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৪ ওভারের একটু বেশি খেলেই ১৩২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ব্রাইডন কার্স নেন ৪ উইকেট ৩৪ রানে, আর অধিনায়ক বেন স্টোকস যোগ করেন ৩ উইকেট।

শুরুতেই স্কট বোল্যান্ড, জেক ওয়েদারাল্ড ও মারনাস লাবুশেন ফিরলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন ট্রাভিস হেড। তবে ৪৬ রানে তাকে বোল্ড করে আবার ধস নামান কার্স। এরপর উসমান খাজা দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে আউট হন, অ্যালেক্স ক্যারি করেন মাত্র ৪ রান।

স্টিভ স্মিথ ও ক্যামেরন গ্রিন কিছুটা লড়াই করলেও, লাঞ্চের পর মাত্র ১৩ রানে চার উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ উইকেট হিসেবে ফেরেন ঝাই রিচার্ডসন, স্মিথ অপরাজিত থাকেন ২৪ রানে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮০ ওভারেরও কম খেলায় শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস—১৯২৮ সালের পর টেস্টে তাদের দ্রুততম ডাবল ধস।

 

news