যাঁরা নিয়মিত আঙুল ফোটান, তাঁদের প্রায়ই শুনতে হয়—এতে নাকি আঙুল মোটা হয়ে যায়, হাড়ের জোড়ায় ব্যথা ধরে কিংবা ভবিষ্যতে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। আঙুল ফোটানো নিয়ে এমন ভয়-ভিত্তিক কথা বহু বছর ধরেই চালু আছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। গবেষণায় উঠে এসেছে, আঙুল ফোটালে আসলে হাড়ের ভেতরে কী ঘটে এবং সেই চেনা ‘ফট’ শব্দের আসল কারণ কী।
বিজ্ঞানীদের মতে, আঙুল বা পায়ের পাতা ফোটানোর সময় যে শব্দ হয়, তা হাড়ের ঘর্ষণ বা তরুণাস্থির ক্ষতির কারণে নয়। ২০১৫ সালে করা এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় রিয়েল-টাইম এমআরআই ব্যবহার করে দেখা গেছে, যখন হাড়ের সন্ধিস্থল টেনে প্রসারিত করা হয়, তখন ভেতরের চাপ হঠাৎ কমে যায়।
আমাদের হাড়ের জোড়ার মধ্যে থাকে সিনোভিয়াল ফ্লুইড নামে এক ধরনের পিচ্ছিল তরল, যা নড়াচড়া সহজ করে। হঠাৎ করে হাড়ের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা বেড়ে গেলে ওই তরল সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা পূরণ করতে পারে না। তখন সেখানে তৈরি হয় গ্যাসের একটি শূন্যস্থান বা বুদ্বুদ। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘ট্রাইবোনিউক্লিয়েশন’। আর এই বুদ্বুদ তৈরি হওয়ার মুহূর্তেই শোনা যায় সেই পরিচিত ফটফট শব্দ।
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার অধ্যাপক গ্রেগ কাউচুক বিষয়টিকে ভ্যাকুয়াম বা শূন্যস্থান তৈরির সঙ্গে তুলনা করেছেন। আগে ধারণা ছিল, বুদ্বুদ ফেটে গেলে শব্দ হয়। কিন্তু আধুনিক এমআরআই গবেষণা জানাচ্ছে, শব্দটা আসলে বুদ্বুদ তৈরি হওয়ার সময়ই হয়, ফাটার সময় নয়।
আঙুল ফোটালে আর্থ্রাইটিস হয়—এই বহুল প্রচলিত ধারণাকেও ভুল বলছেন বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত একটি পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানী ডোনাল্ড উঙ্গার। তিনি টানা ৫০ বছর ধরে নিজের বাঁ হাতের আঙুল প্রতিদিন অন্তত দুবার ফোটালেও ডান হাতের আঙুল কখনোই ফোটাননি। ২০০৪ সালে গবেষণার ফল প্রকাশ করে তিনি দেখান, দুই হাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই এবং কোনো হাতেই আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ দেখা যায়নি। এই ব্যতিক্রমী ধৈর্যের জন্য ২০০৯ সালে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে আইজি নোবেল পুরস্কার পান।
অন্য গবেষণাগুলোতেও দেখা গেছে, নিয়মিত আঙুল ফোটানো ও না ফোটানোর মধ্যে হাতের শক্তি বা তরুণাস্থির পুরুত্বে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। গবেষণা বলছে, একবার আঙুল ফোটানোর পর যে গ্যাসের বুদ্বুদ তৈরি হয়, তা আবার তরলে মিশে যেতে কিছুটা সময় লাগে। সে কারণেই সঙ্গে সঙ্গে একই আঙুল আবার ফোটানো যায় না।
সব মিলিয়ে বিজ্ঞানীদের স্পষ্ট বক্তব্য—নিয়মিত আঙুল ফোটালেও হাত মোটা হয় না, তরুণাস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না এবং আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকিও বাড়ে না। যদিও এই শব্দ অনেকের কাছে বিরক্তিকর হতে পারে, তবে এটি হাড়ের ক্ষতির কোনো ইঙ্গিত নয়।
